ইতিমধ্যেই শীতের ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস যা তাতে শীতপ্রেমীদের জন্য বিরাট সুখবর। পারদ নাকি হবে আরও নিম্নমুখী। অক্টোবরের শেষেও যেখানে বাতানুকূল যন্ত্র চলছে পুরোদমে সেখানে এই চিলতে খানিক শীতের পরশ মেখে নিতে বাঙালি এক পায়ে রাজি। হালফিলেও একটা পাতলা উইন্ড চিটার কিংবা চাদরে চলে যাচ্ছিল বাঙালির, জানুয়ারি আসতেই খোঁজ পড়তে শুরু হয়েছে পুরোদস্তুর পশম পোশাকের। পশম পোশাকের খোঁজ হবে আর ওয়েলিংটন স্কোয়ারের নাম কলকাতাবাসীর মুখে আসবে না, তা তো আর হয় না। তাই প্রতি বছরের ন্যায় রমরমিয়ে বিকিকিনি শুরু হয়ে গেছে ভুটিয়া, লেপচা, গোর্খাদের গরম কাপড়ের মেলা।
নিউ মার্কেট থানা থেকে অনায়াসে তিনটে মোড় উত্তরের দিকে হাঁটলে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পৌঁছানো যায়। রয়েছে অগুনতি ট্রাম, বাস ও অটোর বিকল্পও। শীত পোশাকের মেলায় পৌঁছতেই সারিবদ্ধ স্টলের রঙিন পশম পোশাক এক ঝলকে মন কেড়ে নিতে বাধ্য। অধিকাংশ বিক্রেতা পার্বত্য অঞ্চলগুলির প্রতিনিধিত্ব করলেও সমতলবাসীদেরও অস্থায়ী দোকান রয়েছে। ক্রেতাদের অবশ্য ভিড়ের প্রবণতা বেশি মাত্রায় লক্ষ্য করা যায় পাহাড়িদের স্টলেই। বিভিন্ন দাম ও মানের আধুনিক উষ্ণ জামার সম্ভারের পাশাপাশি হাতে বোনা কুটির শিল্পের পসরাও রয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। হালকা থেকে পুরু; সিনথেটিক থেকে পশমিনা – সব ধরণের পোশাক রয়েছে আপনাদের মন জয় করার জন্য। নগদ টাকার পাশাপাশি অনলাইন টাকা প্রদানের বিকল্প সুবিধে করে দিচ্ছে ক্রেতাদের বহুলাংশে।
পারিবারিক ব্যবসা সূত্রে প্রতিবছর ওয়েলিংটন স্কোয়ারে দূর থেকে আসা পেমা গুরুং, নিধি থাপা, তেনজিং গেলেকদের দোকান আলাদা হলেও শীত পোশাকের দামগুলো প্রায় এক। পুরুষ ও মহিলাদের হাফ হাতা সোয়েটার পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে। পুরো হাতার শীত পোশাকের দাম পড়ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। নজরকাড়া লং কোট পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামে। মান অনুযায়ী সেগুলোর দাম পড়ছে ৫৫০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৯০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যেই। মেয়েদের স্টোল ১৫০ টাকা, ছেলেদের মাফলার ও টুপি ২৫০ টাকা থেকে ৪০০টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে বিপুল শালের সম্ভার। ৪৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলি। রয়েছে টুপি, হুডি সহ লেদার জ্যাকেটের বিপুল স্টক।
কেনাকাটার ওপর ছাড়ের সঙ্গে দরদামের পথও রয়েছে খোলা। হাসিমুখে ক্লান্তিহীন পাহাড়ের প্রিয়জনরা ক্রেতাদের শুধু পণ্য যোগান দিয়ে ক্ষান্ত থাকছেন না, সঙ্গে তাদের জীবনশৈলী ও সংস্কৃতির নানা অজানা তথ্য সরবরাহ করে যান্ত্রিক কেনা বেচার একঘেয়েমিকে মুছে দিচ্ছেন অবলীলায়। স্রেফ ব্যবসা নয়, ওয়েলিংটন স্কোয়ার হয়ে উঠেছে প্রকৃত অর্থেই সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মিলন ভূমি।
Discussion about this post