একসময় যে চামড়ার কারখানায় নাভিশ্বাস উঠত তোপসিয়ার গলিঘুঁজিতে, সেসব কারখানা আজ ইতিহাস। কিন্তু সেই ইতিহাসের এক দশক হয়ে গেলেও কলকাতার পূর্ব প্রান্তে এই এলাকা এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারেনি সেই স্মৃতি। যদিও চামড়ার কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অতি পরিচিত সেই দুর্গন্ধ – কারখানার ধোঁয়া এবং বর্জ্য পদার্থ, খোলা নর্দমা এবং কাছাকাছি ধাপার মাঠের জঞ্জালের গন্ধের অদ্ভুত মিশ্রণ – বহু দিন আগেই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গিয়েছে।
১৭৮৪ সালে উড সাহেবের তৈরি কলকাতার মানচিত্রে ডিহি পঞ্চান্নগ্রামের অংশ হিসেবে জায়গা পায় তোপসিয়া। কালের ফেলে ডিহি কথাটির বিলুপ্তি ঘটলেও আজও এই অঞ্চলটিকে বলা হয়ে থাকে পঞ্চান্নগ্রাম। কলকাতার পুরোনো ঐতিহাসিক দলিল এবং নথিপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় যে তোপসিয়ার আশপাশে জলাভূমি থাকায় এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষে পেশা ছিল মাছ ধরা। আর তোপসিয়ার নামকরণও সম্ভবত এই পেশার কারণেই হয়েছিল। কলকাতার বিখ্যাত ঐতিহাসিক পি থাঙ্কপ্পন নায়ারের কথা অনুযায়ী দুই বাংলা আর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বহু জায়গা থেকেই পাওয়া যাওয়া তোপসে মাছ থেকে তোপসিয়া নামটি এসেছে। ২০০০ সালে প্রমোটারদের হাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই এলাকার জলাভূমিতে যথেষ্ট পরিমাণে তোপসে মাছ পাওয়া যেত। এই অঞ্চলের বহু মানুষেরই প্রধান খাদ্য ছিল এই মাছ।
কলকাতার সঙ্গে তোপসিয়ার যোগ আজকের নয়। ফিরে যেতে হবে সেই ১৭১৭ সালে, যখন মুঘল সম্রাট ফারুখসিয়ারের কাছ থেকে কলকাতার আশেপাশে ৩৮টি গ্রামের ইজারা নেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। শেষমেশ ১৭৫৮ সালে নবাব মীর জাফরের কাছ থেকে মোট ৫৫টি গ্রাম কিনেই নেয় কোম্পানি, আগের ইজারা নেওয়া ৩৮ টি গ্রাম সমেত। পরবর্তী কালে এসব গ্রাম হয়ে যায় বাড়তে থাকা কলকাতা শহরের প্রান্তিক অঞ্চল।
Discussion about this post