পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ বনভূমি মানেই আগুনরাঙা লাল পলাশের সৌন্দর্য। তবে লাল পলাশের পাশাপাশি আরও একটি বিরল ও রহস্যময় গাছ রয়েছে, যা উদ্ভিদবিদ্যার জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—শ্বেতপলাশ। এই গাছকে শিবের পবিত্র ফুল হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি আয়ুর্বেদ সাধনায় ব্যবহারের কারণে অত্যন্ত মূল্যবান। তবে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এই গাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বন দপ্তরের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্তমানে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি, পুঞ্চা ও রাকাবের জঙ্গলে মাত্র ১৫টি শ্বেতপলাশ গাছ রয়েছে, যা দিন দিন রুগ্ন হয়ে পড়ছে।

এই গাছ নিয়ে প্রচলিত নানা বিশ্বাসের কারণে এটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। অনেকের ধারণা, শ্বেতপলাশের আঠা বন্ধ্যত্ব দূর করতে পারে, যা নিয়ে এখনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে। এর শিকড় ও ডাল তন্ত্রসাধনার কাজে ব্যবহৃত হয়, ফলে বহু মানুষ গাছের অংশ সংগ্রহ করতে গিয়ে এর ক্ষতি করছেন। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগ কৃত্রিম উপায়ে শ্বেতপলাশের চারা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, টিস্যু কালচার ও অঙ্গজ জননের মাধ্যমে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে একটি ডাল থেকে শতাধিক নতুন চারা তৈরি করা সম্ভব হবে।
গবেষণার অন্যতম সদস্য সৌরভ গড়াই জানিয়েছেন, শ্বেতপলাশের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বন্ধ্যত্ব দূর করার ধারণার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহায়তায় ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। বন দপ্তরের সহযোগিতায় এই নতুন চারাগুলি পুরুলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে রোপণ করা হবে, যাতে এই বিরল প্রজাতির সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।

পুরুলিয়ার বন দপ্তরের কর্মকর্তা অঞ্জন গুহ জানিয়েছেন, জেলার ১৫টি বিদ্যমান শ্বেতপলাশ গাছের দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে এবং স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে, যাতে কেউ গাছের ক্ষতি না করেন। পুঞ্চার রাজনওয়াগড় এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই এই গাছ পাহারা দিচ্ছেন। স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন, কেউ শিকড় নিতে চাইলে তাঁরা তা দিচ্ছেন না এবং গাছ রক্ষায় সক্রিয় রয়েছেন। গবেষকদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে পুরুলিয়ার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও শ্বেতপলাশ নতুন করে বিস্তার লাভ করতে পারে।
চিত্রঋণঃ রাজর্ষি মুখার্জি
Discussion about this post