যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রাম একটি ছোট্ট গ্রাম হলেও তার পরিচয় রয়েছে একটি অনন্য কারিগরির জন্য। এই গ্রামে বহুকাল ধরে বেজির লোম দিয়ে রঙের তুলি তৈরির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য চলে আসছে। এই কারিগরি কেবল একটি পেশা নয়, এটি এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বেজি বা নেউল একটি ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী। বেজির লোম তুলনামূলকভাবে মোটা ধূসর রঙের, গায়ে হালকা ও গাঢ় কালচে দাগ থাকে। সেই সব লোম দিয়েই তৈরি হয় রঙের তুলি। এই তুলিতে রঙ মাখিয়ে শিল্পী তার কল্পনাকে দৃশ্যমান করে তোলেন। মঙ্গলকোট গ্রামের কারিগররা বেজির লোম সংগ্রহ করে তা পরিষ্কার করে নরম করে তোলে। এরপর এই লোমকে একটি নির্দিষ্ট আকারে গুছিয়ে একটি কাঠের বা বাঁশের ডান্ডায় বেঁধে তুলি তৈরি করে। এই তুলিগুলি বিভিন্ন আকার ও মাপের হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের রঙ ব্যবহার করে তা রঙিন করে তোলা হয়। শুধু বেজি না গোরু, ছাগলের লোম দিয়েও তুলি বানান এই গ্রামের কারিগররা।
এই কারিগরি এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি জীবন্ত উদাহরণ। এই কারিগরি স্থানীয় লোকদের জন্য রোজগারের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি হস্তশিল্পের একটি উদাহরণ এবং এর সংরক্ষণ আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তবে বেজির সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে এই তুলি শিল্পের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য বেজির সংরক্ষণ ও প্রজননের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাছাড়া কৃত্রিম তুলির আগমনে এই হস্তনির্মিত তুলির বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে বেজি মারা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় তুলি আমদানিও কার্যত অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ বর্তমানে বাজারে কৃত্রিম রঙ তুলিই বেশি চলছে।
Discussion about this post