সারা বিশ্বকে কৃষ্ণনামে মাতিয়েছিলেন যিনি, তিনি শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। চৈতন্যদেবের জন্মভূমি নবদ্বীপের খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে সারা বিশ্বে। তবে ভোজন রসিক বাঙালির কাছে নবদ্বীপ নামের অন্য একটি সমার্থক ‘সুস্বাদু লাল দই’। পরিস্থিতি যেমনই হোক, বাঙালীর কথায় ভাল খাওয়া দাওয়া না করে বেঁচে থেকে কি লাভ, বলি টাকা তো আর সঙ্গে যাবেনা। তবে এই রসনাতৃপ্তিই কখন কখনও জীবন ধারণের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। হরিনাভি অঞ্চলের বসবাস প্রবীণ সমীর বাবুর। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি নবদ্বীপের লাল দইকেই জীবন লড়াইয়ের ভিত্তি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আট থেকে আশি ! সবারই পছন্দের তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে নবদ্বীপের লাল ক্ষীর দই। লাল দইয়ের আবিষ্কর্তা হিসাবে কালীপদ মোদকের নামই সবচেয়ে জনপ্রিয়। আগেকার সময়ে কলকাতা থেকে কোচবিহার তাঁকে চিনত ‘কালী ময়রা’ নামে। আর হরিনাভি সহ রাজপুর, সুভাষগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে লাল দইয়ের কথায় প্রথমেই মনে আসে সমীর বাবুর কথা। বয়সের ভারে কিছুটা ঝুঁকে পড়লেও আজও নিজের মনের জোড়কে হাতিয়ার করে লাল দই পৌছে দেন প্রতিটি অলি গলিতে।
বয়সে প্রবীণ উচ্চ শিক্ষিত সমীরবাবু নির্দ্বিধায় মিশে যান গ্রাহকদের সাথে। অভাবের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যাক্তি। তাই তপ্ত রোদ কিংবা বৃষ্টি নিজের সঙ্গী ভাঙা সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন পেটের টানে। সমীর বাবুর কথায়, “দই সাধারণত সাদা হলেও নবদ্বীপের লাল দই একটি স্বতন্ত্র উপাদেয় মিষ্টান্ন। নবদ্বীপের লাল দইয়ের নাম পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গায় আছে। দুধ ঘন হলেই সেটি প্রায় ক্ষীরের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তাই অনেক সময় এই দইকে ক্ষীর দইও বলে।”
সময় ও দুর্মূল্যের বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যখন সবাই ক্লান্ত। ঠিক তখনও নিজের বয়সের ভারকে অপেক্ষা করে ভিক্ষা বৃত্তির বদলে মাথা উঁচু করে বেচে থাকার পথ বেছে নিয়েছেন প্রবীণ সমীর বাবু। তাই সমীর বাবুর সাথে দেখা হলে তার অপূর্ব স্বাদের লাল ক্ষীরদই একবার চেখে দেখতেই পারেন। কারণ ওনার দই বিক্রির ওপরই নির্ভর করে, তার সুষ্ঠ জীবনযাপন, সর্বোপরি তার গোটা সংসারের ভাল থাকা।
Discussion about this post