তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের মতই বাঙালি তথা সারা ভারতবাসীর মনে কৌতুহল জাগায় অন্য আরেকটি বিষয়ও। তা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের তালিকায় আদৌ তাঁর নাম ছিল কি? নাকি পুরোটাই কোনও চক্রান্ত? তিনি যেভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে গেলেন সেভাবেই এই বিষয়টিও কি এক রহস্য হয়েই থেকে যাবে? এই উত্তরের আশায় এখনও অবধি হয়েছে প্রচুর গবেষণা এবং তদন্তও। শেষ পর্যন্ত মিলেছে উত্তর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের তালিকায় নাম নেই তাঁর৷ কোনও দিন ছিলও না। বরং লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ওয়্যার যাদুঘরের মতে তিনি পরিচিত এক বিশ্বাসঘাতক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে। ১৯৯৮ সালের ২৫ নভেম্বর ভারতের হাই কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে জানানোও হয় এই কথা। যদি তিনি এরকম কোনও তালিকায় যুক্ত থাকতেন তবে বিশ্বযুদ্ধের পরে তাঁর মৃত্যু বা অন্তর্ধানের পরই মুছে ফেলা হত তাঁর নাম। সেইসময় তাঁকে শুধুই বিশ্বাসঘাতক হিসাবেই চিহ্নিত করা হত। কথাগুলি যাঁর প্রসঙ্গে বলা তিনি আর কেউ নন, ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিপ্লবী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।
২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর ১১৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিপ্লবী সম্পর্কিত ১০০ টি ফাইলের প্রচুর তথ্য প্রকাশ করেন। সেখানেই বিষয়টি জনসাধারণের সামনে আসে। ইন্ডিয়ান হাই কমিশনকে লেখা ইম্পেরিয়াল ওয়্যার যাদুঘরের এক ঐতিহাসিকের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশি ও কমনওয়েলথ অফিসের অন্যতম ঐতিহাসিক নাইজেল জার্ভিস জানিয়েছিলেন যে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় নেতাজীর নাম কোনও ভাবেই থাকা সম্ভব নয়। তিনি যেহেতু ভারতীয় ছিলেন তাই তাঁর মামলাটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় না পড়ে ব্রিটিশ/ ভারতীয় আইনের আওতাতেই নজরে আনা হত। অতীতেও বহুবার একই প্রশ্ন ওঠায় বিদেশি বা কমনওয়েলথ অফিসের প্রতিরক্ষা শাখা সমস্ত উত্তরই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিল। তারাও জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় নেতাজীর নাম ছিল তা প্রমাণ করার মত কোনও উপযুক্ত তথ্যই কোনওদিন মেলেনি। তাই যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তাঁর নাম সামনে আনার কোনও কারণই তাঁরা পাননি। এমনকি জার্ভিস এও নিশ্চিত করেছিলেন যে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের কোনও তালিকাই ছিল না। এই তালিকা কেবলমাত্র জাপানি এবং জার্মানদের জন্যই বরাদ্দ ছিল।
এত কিছুর পরেও এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ২০১৫ সালে চূড়ামণি নগেন্দ্র নামে বেঙ্গালুরুর এক সাংবাদিক আরটিআইয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে নেতাজীর অস্তিত্ব প্রসঙ্গে জানার জন্য তথ্য চেয়েছিলেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রক এই জাতীয় তথ্য দিতে অস্বীকার করে। তখনই নতুন করে জাগে প্রশ্ন। তাহলে কি সরকারের কাছে নেতাজীর ব্যাপারে উপযুক্ত তথ্য বা প্রমাণ কোনওটাই নেই? নাকি তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে? এমনকি নেতাজীর জীবন প্রসঙ্গে গবেষক অনুজ ধরও এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে শত বিতর্কের মধ্যেও আশার আলো এটাই যে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় নেতাজীর নাম না থাকা। যা স্পষ্টতঃ দিনের আলোর মতই পরিষ্কার।
Discussion about this post