বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক নারীবাদী ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সমাজ বিশ্লেষক সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ‘লন্ডন লিটারেসি সোসাইটি’র একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রচনা করেছেন একের পর এক উপন্যাস, যেগুলি নারীবাদী মানুষের কাছে, সর্বোপরি প্রগতিশীল মানুষের কাছে আজও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। আজকের দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজের কোটের মধ্যেই নুড়িপাথর ভরে ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ ৫৯ বছর বয়সে বাড়ির পাশে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরেও, তাঁর মানসিক অবসাদের ভয়াবহতাকে অস্বীকার করে, সমাজ তাঁর আত্মহননকে দেখিয়েছিল ভীরুতা এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হিসেবে।
সেই সময় তো বটেই, আজকের সময়ে দাঁড়িয়েও সম্ভবত স্বতন্ত্র, স্বাধীন নারীর যেকোনো দুর্বলতা সমাজের কাছে অস্বীকার এবং ব্যঙ্গের বিষয়ই। বলা বাহুল্য, ভার্জিনিয়া উলফের মত স্বতন্ত্র শিল্পীও সেই জায়গা থেকে রেহাই পাননি। এই ভার্জিনিয়া উলফের শরীরে নাকি বইছিল বাঙালির রক্ত! খুব সম্প্রতি সেই কথাই জানিয়েছেন তাঁর এক বংশধর। জানিয়েছেন তাঁর নাতি স্কটিশ লেখক-ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। ডালরিম্পল বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দা। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্রিটিশ সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফের সঙ্গে বাংলার যোগের কথা।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ডিএনএ টেস্টিং করে মানুষ তার জিনের ইতিহাসকে জানতে শিখেছে। ডিএনএ টেস্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে বংশগত যোগাযোগ, জাতিগত মিশ্রণের যাচাই করা অনেক সহজ হয়েছে। সারা পৃথিবীর সঙ্গে মানুষ তার নিজের যোগ দেখে বিস্মিত হয়েছে। আজ এই প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়। আর বিজ্ঞানের কাছেও তা অতি স্বাবাভিক। কারণ, জাতিগত মিশ্রণগুলি মূলত মানব অভিবাসনের ফলেই হয়েছে। আর ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশসহ আরও বিভিন্ন দেশের এবং জাতির উপনিবেশ ভারতেও যে জাতিগত মিশ্রণ ঘটবেই, তা অতি স্বাভাবিক ঘটনা। তাই, ডালরিম্পলকে ডিএনএ টেস্ট করতে হয়নি। পারিবারিক ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করেছেন, যে তিনি এবং ভার্জিনিয়া আংশিকভাবে বাঙালি।
ভার্জিনিয়ার দিদিমা নাকি ছিলেন ফরাসি। তিনি চন্দনগরে এসে এক বাঙালি পুরুষকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক কন্যা হয়। সেই কন্যা পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে চলে যান এবং এক ব্রিটিশকে বিয়ে করেন। তাঁদেরই সন্তান ভার্জিনিয়া। অর্থাৎ ভার্জিনিয়ার দাদামশাই ছিলেন বাঙালি। ভার্জিনিয়ার মা ব্রিটেনে গিয়েও বাঙালি ঐতিহ্য মেনে চলতেন। লন্ডনে থাকার সময় তিনি ভারতীয় গয়না এবং জামাকাপড় পরতেন। ভার্জিনিয়ার মাসি জুলিয়া মার্গারেট কলকাতাতেই থেকে যান। ডালরিম্পলের কথায়, ‘ভার্জিনিয়ার মুখে বাঙালি ছাপ খুব স্পষ্ট ছিল। আমি ওঁর দুই প্রজন্ম পরে। তাই ওঁকে কখনও দেখেনি। কিন্তু আমাদের দু’জনের শরীরেই যে বাঙালি রক্ত রয়েছে, তা পরিষ্কার।’ ডালরিম্পল, ভার্জিনিয়ার এই অজানা দিকটি নিয়ে বই লিখতেও চান।
Discussion about this post