সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার মর্মান্তিক ঘটনা সারা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নারী সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে উঠেছে প্রশ্ন এবং সেই সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মহিলাদের ন্যায়ের জন্য লড়াই জোরদার হয়েছে। এমন সময়ে গোয়ারা গ্রামের মহিলারা এক ঐতিহাসিক উদাহরণ তৈরি করেছেন, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এবং দুর্গাপুজোর মতো বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে। পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের পাশের গোয়ারা গ্রামের পুজোর দায়িত্ব এবারে পুরোটাই নিয়েছেন মহিলারা। ঠাকুর বায়না থেকে চাঁদা তোলা, গোয়ারা গ্রামীণ সর্বজনীনে এবারে মহিলারাই সর্বেসর্বা।
হাটকালনা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রামে ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল বারোয়ারি দুর্গাপুজো। প্রথমদিকে পুরুষদের সহযোগিতায় এই পুজো চললেও, এই বছর গ্রামের মহিলারা সেই পুজোর দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। বর্তমানে গোয়ারা গ্রামীণ সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির নেতৃত্ব পুরোপুরি মহিলাদের হাতে। এ বছর ১৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে এই পুজো, আর সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন মন্দির। এই নতুন মন্দিরের নির্মাণের পিছনে রয়েছে গ্রামবাসী মহিলাদের এক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। স্থানীয় মহিলারা নিজেদের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের টাকা জমিয়ে এই মন্দির গড়ার কাজে অনুদান দিয়েছেন।
পুজো কমিটির সভাপতি কনিকা অধিকারী জানান, মহিলাদের এই উদ্যোগ শুধু মন্দির তৈরিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, পুরোহিত নির্বাচন, চাঁদা তোলা, এবং পুজোর বিভিন্ন কাজেও মহিলারা সম্পূর্ণরূপে সক্রিয়। গোয়ারার কর্মকারপাড়ায় প্রয়াত রতন দাসের পরিবারের দেওয়া জায়গায় তৈরি এই মন্দিরে এ বছর প্রথমবার দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
পুজোর বাজেট এবার লক্ষাধিক টাকা ছাড়িয়েছে। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত চলবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কনের প্রতিযোগিতা। পুজোর অষ্টমীর দিন এলাকার সমস্ত মানুষের জন্য এক বিশাল ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে পোলাও, আলুর দম, পায়েস সহ বিভিন্ন পদ থাকবে। এছাড়াও মণ্ডপে থাকবে নারী সচেতনতা সঙ্গেই পরিবেশ রক্ষার্থে কি করা উচিৎ সেই বিষয়ক ব্যানার। আলো দিয়ে সাজানো হবে গোটা স্থানটি। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভাগীরথী নদীতে মহিলাদের শোভাযাত্রা ও মণ্ডপে সিঁদুরখেলার আয়োজন বিশেষ আকর্ষণ হতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন পুজো কমিটির সভাপতি। ফলে বলতে গেলে, এই কঠিন সময়ে, যেখানে রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র, সেখানে গোয়ারা গ্রামের মহিলাদের এমন নেতৃত্ব সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
Discussion about this post