“বেড়াল বলে মাছ খাব না, আঁশ ছোঁব না কাশী যাব”। কথাটা অল্পবিস্তর প্রত্যেকেই শুনেছেন। সত্যিই বিড়াল আবার মাছ খাবে না, তাও আবার হয় নাকি? কী ভাবছেন, হুট করে পশুদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে কেন পড়লাম? এমনই একটি তথ্য জানাতে চলেছি আপনাদের, যে শুনে আশ্চর্য হতেই হবে। হিংস্র বা মাংশাসী হয়ে জন্মেও, মাংস না ছোঁয়া এক প্রাণী। এমন বিরল ঘটনা আবার অন্য কোথাও নয়, ভারতের মাটিতেই।
কেরালার কাসারাগড় জেলার অনন্তপুরম গ্রাম। সেখানেই অনন্তপুরম লেক পবিত্র মন্দিরের সংলগ্ন এক হ্রদ। এই হ্রদেই বাস করে সেই মাংশাসী, থুড়ি নিরামিষাশী কুমির। গ্রামের লোকেরা তাই ভালোবেসে নাম দেয় বাবিয়া। তার খাদ্য বলতে মন্দিরের ভাত, গুড়, পুজোর প্রসাদ।
শোনা যায়, ৭০ বছর মতো আগে এই মন্দিরের পাহারায় থাকা কুমিরকে, এক ব্রিটিশ সৈন্য হত্যা করে। ফলস্বরূপ সেই ব্যক্তি নাকি সাপের কামড়ে মারা যায়। তারপরই আরেক কুমীরের আবির্ভাব হয় ঐ হ্রদে। এমনকি আজ অবধি কখনোই ঐ হ্রদ কুমীরশূণ্য থাকেনি। কোনো কুমির মারা গেলেই, আরেক কুমীরকে দেখা যায়। মন্দিরের কর্মচারীরা দায়িত্ব নিয়ে খাবারও খাওয়ায় তাকে। ১০ বছর ধরে খাওয়ান এমন এক কর্মচারীর সাথে সেই কুমিরের সখ্যতা বেশ জমাটি। তিনি প্রতিদিন ১ কেজি ভাত নিজে হাতে করে ওর মুখে ভরে দেন। তবে মাংস তাকে একদমই দেওয়া হয়না। সে এতটাই বাধ্য যে হ্রদের মাছও খায় না।
কুমির বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরীর মতে, এদের প্রাকৃতিক ডায়েট প্রাথমিকভাবে মাছ। এরা হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদির মতো ছোট এবং বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীও খেয়ে থাকে। তবে কুমির দ্বারা কেউ আক্রান্ত না হওয়ার পেছনে, তিনি কিছু তথ্যপূর্ণ যুক্তি দেন। এর উত্তরে বিশেষজ্ঞ বলেন, কুমিরের শেখার দক্ষতা প্রবল। কোনও কুমিরকে ট্রেনিং দেওয়া, কুকুরকে ট্রেনিং দেওয়ার থেকেও নাকি সহজ। যে ব্যক্তি তাকে রোজ খাওয়ায় তাকে চিনে রাখাটা, কুমীরের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর কাছে একেবারেই স্বাভাবিক। তবে হুমকির মুখে পড়লে এটি আক্রমণ করতেই পারে। আরও এক কুমির বিশেষজ্ঞ জিগার বলেন, এই বিশেষ কুমিরটির আচরণ সম্ভবত অভ্যাসগত ও শর্তযুক্ত আচরণ। তবে কুমিরকে খাওয়ানো এবং তার সান্নিধ্যে থাকা ঠিক কথা নয়। যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে। এমন প্রাণীর দেখভাল কেবল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের দ্বারা করানো উচিত।
Discussion about this post