লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকায় চিন-ভারত সংঘর্ষের জেরে ইতিমধ্যেই সারা দেশজুড়ে উত্তেজনার আবহ। প্রায় ৪৫ বছর পর ভারত-চীন সীমান্তে আবারও ঝরল রক্ত। ২০২০ সালে করোনার পাশাপাশি মানুষের মুখে মুখে সর্বোচ্চ উচ্চারিত শব্দ ‘গালওয়ান’এর নামকরণের পেছনে রয়েছে এক লম্বা ইতিহাস। প্রায় ১২৫ বছর আগে এই উপত্যকার নামকরণ হয়েছিল লাদাখের গোলাম রসুল গালওয়ান নামের এক কিংবদন্তি পর্বতারোহীর নামানুসারে। এই অঞ্চলে আকসাই চীন ও পূর্ব লাদাখের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে এক পাহাড়ি নদী। এ নদীর উৎস কারাকোরামের গিরিকন্দরে।
এই ‘গালওয়ান’ শব্দটি একটি কাশ্মীরি শব্দ, যার অর্থ ‘ডাকাত’। কথিত আছে, গোলাম রসুল গালওয়ানের দাদা কারা গালওয়ান ছিলেন সমসাময়িক সময়ে বড়লোকদের ত্রাস, আর গরীবদের ভগবান। শোনা যায়, তিনি ধনীদের সব সম্পদ লুঠ করে গরীবদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতেন। এরপর রাজার ঘরে ডাকাতি করতে গিয়ে তার গলায় অস্ত্র ধরেন গালওয়ান আর সেখানেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। আত্মরক্ষার্থে তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায় লাদাখে, আর তাদের নামের থেকেও ততদিনে বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায় তাদের পদবী ‘গালওয়ান’ শব্দটি।
১৮৭৮ সালে লাদাখের রাজধানী লেহ-তে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম রসূল গালওয়ান। পর্বতারোহণ এবং ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের পাহাড়ি পথ বাতলে দেওয়াকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন গোলাম। সালটা ১৮৯২ পামীর ও কাশগড় পর্বতে চার্লস মারের সঙ্গে অভিযান শুরু করেন গোলাম। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ের কোলে গভীর গিরিখাতের মাঝখানে আটকে যায় ওই অভিযাত্রীর দল। হাজার চেষ্টা করেও সেই গোলকধাঁধা থেকে মুক্তির পথ দেখছিল না অভিযাত্রীরা। এমন সময়েই ১৪ বছরের গোলাম অভিযাত্রীদের পথ বাতলে দেন এবং সেবারের মত সকলেই প্রাণে বাঁচেন।
এইসময় দলের নেতা কিশোর গোলামের প্রতিভা এবং দায়িত্বশীলতা দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে নতুন আবিস্কৃত রাস্তাটির পাশে বয়ে চলা নদীটির নাম রাখেন গোলান রসুল গালওয়ানের নামে। গালওয়ান নদী থেকেই এই উপত্যকার নাম হয় গালওয়ান উপত্যকা। বর্তমানের রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি যেন ক্রমে ভুলিয়েই দিতে বসেছে এই অঞ্চলের আশ্চর্য ইতিহাসের কথা। আজকে লাদাখ জনপ্রিয় পর্যটন শিল্পের সুবাদে, কিন্তু একটা সময় এই অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের একমাত্র রোজগার ছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম রাস্তার সন্ধান করা। আর গোলাম রসুল গালওয়ান প্রথম এই ধারার সূচনা করে লাদাখের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে যান।
Discussion about this post