এ যেন এক অন্য ধারার স্কুল। পাঁচিলহীন, সিলেবাসবিহীন, ভয় তাড়ানোর ইস্কুল। মনের গভীরের সুপ্ত প্রবণতাগুলোকেই একটু উসকে দেওয়ার চেষ্টা। তথাকথিত ইঁদুর দৌড় ছেড়ে মানুষ হওয়ার ম্যারাথনে সামিল হওয়া। হ্যাঁ, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুর অঞ্চলের কাটাখালে ঠিক এরকমই অন্য ধারার এক স্কুলের চেষ্টায় সুমিত মণ্ডল। সপ্তাহান্তে কিছু বাচ্চা শিক্ষার্থীকে ‘মানুষ’ করে তোলার প্রচেষ্টাতেই এই স্কুলের জন্ম দিতে চান তিনি। সিলেবাসের অঙ্ক আর ইংরাজি এই দুটি বিষয়ে ভয় থাকে না এমন ছেলেপুলের সংখ্যা হয়ত হাতে গোনা। এই স্কুল গড়ে উঠেছে সেই ভয় কাটানোর উদ্দেশ্যেই। সিলেবাসের বাইরে আরও একটি বিষয়েও ভয় কাটানোর শিক্ষা দেওয়া হবে এখানে, তা হল ভূত।এরই সঙ্গে অর্জিত শিক্ষাকে সামাজিক কাজে লাগানোর জ্ঞানও প্রাপ্তি হবে বিদ্যার্থীদের। তা সে অসহায় কোনো বৃদ্ধের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে রক্তের প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাঙ্কে যোগাযোগ, যা কিছুই হোক না কেন। এক কথায় তথাকথিত সিলেবাসের বাইরে ছাত্র সমাজকে এক মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই এই স্কুলের জন্ম।
এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশ কিছু ভাবনাচিন্তা রয়েছে সুমিত বাবুর। পড়ুয়াদের পরিচয় থাকবে শুধুই ‘মানুষ’ হিসাবে। কোনো প্রথাগত ধর্ম বা পদবীর উল্লেখ থাকবে না। বরং তাদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে নামের সাথে যুক্ত করা হবে। কোনো বাঁধা ধরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, বরং যে কোনো প্রশ্ন করা ও প্রশ্ন তোলার বিষয়ে মনোযোগী করে তোলা হবে শিক্ষার্থীদের। পড়াশোনার বাইরে যার যেদিকে আগ্রহ, সেই ব্যাপারে উৎসাহ তৈরী করা হবে। হাতে কলমে বাস্তব উদাহরণ সহযোগে যে কোনো বিষয়ের প্রাথমিক ধারণা নির্মাণ করাও শেখানো হবে এই স্কুলে। মানবিকতার পাঠ দেওয়ার সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান মনস্ক করে তোলাও এই স্কুলের অন্যতম উদ্দেশ্য।
আপাততঃ স্কুল গঠনের স্থান নির্বাচন তো হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পিত স্বপ্নসন্ধান পুস্তক সমবায়ের পার্শ্বস্থ একফালি জমিতেই গড়ে উঠবে পাঁচিলহীন, সিলেবাসহীন এই স্কুল। আগামী ৪ এপ্রিল স্কুলটির উদ্বোধন হবে। সকলের অনুভবী, সামাজিক ভাবনায় এক প্রাণবন্ত ফলাফলের প্রত্যাশায় এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে শুরু হোক এই অভিযান, এমনটাই আশা রাখছেন এই স্বপ্নের কারিগর সুমিত মন্ডল।
Discussion about this post