ছবিঃ প্রতীকী
রাতের অন্ধকারে হঠাৎ ভেসে ওঠে এক দৃশ্য। বাজনার শব্দ, মন্ত্রোচ্চারণ, আর গভীর প্রার্থনার ভেতর যেন দেবীর আগমনের ইঙ্গিত। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই বিলের জলে ভেসে ওঠে একটি ঘট, আর তার ওপরে লাল টকটকে একটি জবা ফুল। সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু এক অনন্ত যাত্রা। যাত্রা আটপলগাছি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর। এই দৃশ্য স্বপ্নে দেখার পরেই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন তাঁরা।
প্রায় চারশো বছর আগে মুর্শিদাবাদের এই গ্রামে দুর্গাপুজোর কোনো প্রচলন ছিল না। পূর্বপুরুষদের সেই অলৌকিক স্বপ্নাদেশ থেকেই শুরু হয় পূজা। বিল থেকে উদ্ধার হওয়া ঘটটি ভক্তি ভরে মন্দিরের বেদীর তলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই মহালয়ার পর প্রতিপদে ঘটভরা দিয়েই পুজো হয়। সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলালেও পুজোর নিয়ম, কায়দা আর আচার-অনুষ্ঠান রয়ে গেছে সেই একইরকম।
এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য মাছের ভোগ। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিনই অন্নভোগের সঙ্গে মাছের ভোগ থাকা বাধ্যতামূলক। এমনকি অষ্টমীর দিনও মা দুর্গাকে মাছ উৎসর্গ করা হয়, যা বাংলার অন্যান্য জায়গার পুজোতে খুব কমই দেখা যায়। দেবী এখানে পূজিত হন মূর্তিতেই এবং সমস্ত আচার পূর্বপুরুষদের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই চলে আসছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
স্থানীয় মানুষজন ভিড় জমান এই পূজোকে ঘিরে উৎসবের আবহে সামিল হতে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা চ্যালেঞ্জও এসেছে, বিলের জলের পরিবর্তন, নদীর প্রবাহে ভাঙন, আর আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ধরে রাখা। তবুও, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার আজও সেই পুরনো মন্ত্র আর বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যেন প্রতিটি দুর্গাপুজোই নতুন করে ফিরিয়ে আনে চারশো বছরের ইতিহাস ও রহস্যময়তার ছাপ।
Discussion about this post