ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি ঘুরতে যাওয়ার নাম উঠলেই যে প্রশ্নটা সবচেয়ে আগে মাথায় আসে তা হল- পাহাড়,সমুদ্র না জঙ্গল? তবে যারা শান্তিতে নিরিবিলিতে সময় কাটাবে ভাবেন তাদের তালিকায় পাহাড়ই আগে জায়গা করে নেয়। এক্ষেত্রে দ্বিমত খুব কমই রয়েছে। তবে আজ চলুন এমন এক জায়গার কথা জেনে নিই যেটা কিনা আলিপুরদুয়ার জেলায় পশ্চিমবঙ্গের শেষ গ্রাম। বলতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের এক ‘হিডেন জেম’! নামটা ভারী মিষ্টি! তুরতুরি খন্ড গ্রাম। শুধু যে নামটা মিষ্টি তা নয়, সঙ্গে জায়গাটার বর্ণনা জানলে এক ঝটকায় ভালোবেসে ফেলার মতন-ও বটে। নিস্তব্ধ সবুজ জঙ্গলে সাজানো এক প্রত্যন্ত গ্রাম। সারাদিন পাখিদের কিচিরমিচির আর বন্য জীবজন্তুর ডাক যেন ঘিরে রাখে গ্রামটিকে। রাতের গভীর নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে কানে আসে ঝিঝিপোকার ডাক আর রাত জাগা পাখির ডাক। সবটাই এক স্বপ্নের মতো!
তবে এখানেই শেষ নয়। তুরতুরি থেকে ভুটানঘাটের দিকে গেলে দেখা যাবে জায়গাটির প্রধান আকর্ষণ। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালা পাহাড়। পাহাড়টির সৌন্দর্য্য না দেখলে অনুভব করার উপায় নেই। সামনে দাঁড়ালে মনে হবে কোনো এক দক্ষ শিল্পী তার তুলির ছোঁয়ায় অনন্য এক রূপ দান করেছে পাহাড়টিকে। আর যখন সূর্যের আলো পড়ে এই কালো পাথরের উপর, আহা! কী অপূর্ব সেই রূপ। ঠিক মনে হবে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে এক কালচে রূপোলি আভা। ঠিক তার সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে হিম শীতল কাঁচের মত স্বচ্ছ রায়ডাক নদী। এই নদীটিকে ভারত ও ভুটানের বর্ডার হিসেবে ধরা হয়। নদীটির চারপাশ জুড়ে পড়ে রয়েছে কালা পাহাড়ের কালো কালো বিভিন্ন আকৃতির পাথর। কখনো কখনো নদীর ধারে হাতি,চিতা বা আরো নানা বন্য জন্তু বা পাখির পায়ের ছাপ-ও চোখে পড়ে।
এই তুরতুরি গ্রামে রয়েছে জঙ্গলের মাঝে কাঠের হোমস্টে-তে রাত কাটানোর ব্যবস্থা। আর গ্রাম থেকে কালাপাহাড় যাওয়ার পথের ব্যবধান মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ। পুরোটাই যেতে হবে বাইক ভাড়া করে। কারণ সেই পথে বড় গাড়ি খুব একটা যায় না। বাইক ভাড়া ৫০০ টাকা।পাথরের রাস্তার উপর দিয়ে বাইকে করে যাওয়া আর দু ধারে ঘন জঙ্গল, তাছাড়া মানুষজনও খুব একটা চোখে পড়বে না এই পথে। এই ৫ কিমির পথটা যেন এজন্মে ভোলার মতো নয়। সব মিলিয়ে অনন্য এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে একবার বেরিয়ে পড়ুন এই তুরতুরি গ্রামের উদ্দেশ্যে।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – অঙ্কিতা ভরদ্বাজ
Discussion about this post