দুর্গাপুজোর মতোই গ্রাম বাংলার কোণে কোণে লুকিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালী পুজোর ইতিহাস। মেদিনীপুরের খেপুতে প্রথম সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের পুজো তার মধ্যে অন্যতম। পূর্বে এই এলাকার হুজুরি জমিদার ছিলেন বর্ধমানের মহারাজগণ। বর্ধমানের রাজপরিবারের সাথে বড়িশার জায়গীরদার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সাবর্ণ গোত্রীয় রামদুলাল রায় চৌধুরী ১৭৭২ সালে মেদিনীপুর জেলার চেতুয়া গ্রামের জমিদারি লাভ করেন। তিনি রূপনারায়ণ নদের পশ্চিম তীরে খেপুত উত্তরবাড় গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। একই সঙ্গে নির্মাণ করেন মাটির ঠাকুরঘর। প্রায় ২৫০ বছরের সেই ধারা আজও অক্ষুণ্ণ!
এটিই মা খেপতেশ্বরীর প্রাচীন মূর্তি। কালীঘাটের দেবী কালিকা হলেন এই বংশের ইষ্টদেবী। তাঁর অনুকরণেই খেপুতের দেবীর নাসিকায় রসকলি, বৈষ্ণবী তিলক। দীঘল নয়না দেবীর গলায় ঝুলছে নরমুণ্ডমালা। ১৭৭৯ সালে দক্ষিণমুখী আটচালা মন্দির নির্মিত হয়। প্রাচীন রীতি মেনেই বংশানুক্রমিক ভাবে ছুতোর, নাপিত, কামার, মালাকার, গয়লা সকলে আজও এ বাড়ির পুজোয় যোগ দেন। মৃৎশিল্পী আজও সাবর্ণদের ঠাকুর তৈরি করে তবেই অন্য কালী ঠাকুর তৈরিতে হাত দেন। প্রাচীন করাল বদনা কালী সেজে ওঠেন ডাকের সাজে। এই বাড়ির দেবীপ্রতিমার গায়ের রঙ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। পুজোর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে ‘সাবর্ণ রায় চৌধুরী গোষ্ঠী সংসদ’।
বিজয়া দশমীর দিন বিশেষ নিয়মে পুকুর থেকে মাটি তোলা হয়। পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা তৈরীর কাজ। নিয়ম মেনে পারিবারিক আটচালাতেই তৈরী হয় প্রতিমা। এই বাড়ির মহিলারা কালী পুজোয় কেবল ভোগ রান্নাতেই অংশ নিতে পারেন। বাড়ির অধীনস্থ একটি পুকুরের মাছ দিয়েই দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। পুজোর যাবতীয় কাজ করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। মানতের জন্য প্রচুর ছাগবলিও হয় এই পুজোয়! আগে সেই সংখ্যাটি শতাধিক হলেও, বর্তমানে তা ঠেকেছে ১৫-২০তে। দীপাবলীতে বাড়ির মেয়েরা বাজি প্রদর্শনীতে মেতে ওঠেন। এই প্রাচীন প্রতিটি রীতিনীতি মেনেই পুজো হয় আজও। বলাই বাহুল্য, নিজেদের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে অটুট রাখতে সফল খেপুতের সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার!
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – শুভদীপ রায় চৌধুরী
Discussion about this post