রামাদানের পবিত্র মাস শেষ হতে বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। জগৎ জোড়া মুসলিমরা বহু আকাঙ্খিত চাঁদের অপেক্ষায়। চলছে বাজার হাটে কেনাকাটার ধুম। জামা-জুতো, গয়নাগাটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে প্রসাধনীর বিপুল কেনাবেচা। আর ঈদ সম্পর্কিত প্রসাধনীর উল্লেখ হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মেহেন্দি-সুরমার সঙ্গে মন জুড়নো আতরের নাম। প্রসঙ্গত, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে সুগন্ধির। বিভিন্ন ধর্মের আচার বিধির ওপর আলোকপাত করলেই সুগন্ধির তাৎপর্য্য বোঝা যায়। ইসলামী সংস্কৃতিও এর ব্যতিক্রম নয়।
‘ইত্র’ বা আতর তার পবিত্রতার দরুন ঈশ্বর আরাধনার সঙ্গে জুড়ে আছে হাজার হাজার বছর ধরে। স্বয়ং হজরত মহম্মদও আতরের গুণমুগ্ধ তো ছিলেনই, বিশ্বনবী তাঁর অনুগামীদের ধৰ্মীয় আচার পালন করার পূর্বে আতর ব্যবহারের নির্দেশও দিয়েছিলেন। চিত্ত শুদ্ধির জন্য ‘হালাল’ পণ্যটি সুফি সাধকদের মতে ভোগের নয় বরং আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের সুরভিত সেতু। বঙ্গভূমির আতর সংস্কৃতিও প্রাচীন। ইসলামী ও সুফি সংস্কৃতির হাত ধরে আতরের উপস্থিতি সুলতানি আমল থেকেই দেখা যায়। সেই ধারা আজও চলছে পুরোদমে। উৎসবের আবহে আতরের রৌনক দেখার মতো।
তিলোত্তমা কলকাতার মুসলিম প্রধান অঞ্চলে আতরের বহু দোকানপাট দেখা যায়। তবে আতরপ্ৰিয় শহরবাসীর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে যে স্থানের নাম জ্বলজ্বল করে সেটা হলো নাখোদা মসজিদের খুব কাছে অবস্থিত কলুটোলা। সারি সারি আতরের দোকান নিমেষে আকর্ষণ করে সুগন্ধ-রসিক ক্রেতাদের। গোলাপ, চন্দন, কস্তুরী, জুঁইয়ের মতো মৌলিক আতর ছাড়াও জান্নাত-উল-ফিরদৌস, জমজম, মুখল্লত সহ শতাধিক সুগন্ধি বিভোর করে দেয় মনকে। কলুটোলার আতরবাজারের প্রথম সারির দোকান হচ্ছে- দ্য ড্রাগ অ্যান্ড পারফিউমেরী হাউজ’। ভারত স্বাধীন হওয়ার বছরেই শুরু হয় তাদের পথ চলা। রয়েছে আতরের বিপুল সম্ভার। সব বিত্তের ক্রেতাদের জন্যই রয়েছে আতরের আয়োজন। সংস্থার তরুণ কর্ণধার জাইদ আহমেদ বলেন ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী দোকানে আতর তৈরী করে দেওয়া হয়। ৩, ৬ ও ১২ মিলির বোতলে আতর মৌলিক ও মিশ্রণ দুই প্রকারেই উপলব্ধ। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০০ টাকা অবধি আতরের দাম ঘোরাফেরা করে।
কলুটোলার আতর ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন ইথাইল অ্যালকোহল বর্জিত সুগন্ধিকে একমাত্র পবিত্র মনে করা হয় উপাসনার প্রাঙ্গণে। তবে তরুণ প্রজন্ম ঔদ, অ্যাম্বর, রূহ-আল-হায়ার মতো দামি আতর থেকে সরে এসে তুলনামূলক কম দামের পশ্চিমী সুগন্ধির আদলে তৈরী পারফিউম কিনতে বেশি উৎসাহী। তবে রসিক ক্রেতাদের সংখ্যা কম নয়। প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরী হওয়া আতর উৎসবের মরসুমে শহরবাসীর প্রথম পছন্দ।
Discussion about this post