বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। সেই পার্বণকে ঘিরেই তার আবেগ, তার অপেক্ষা, ঘর ফেরা সব কিছু। শারদ উৎসবের পর দেবী শ্যামা রূপে দীপাবলির রাতে আলোর রোশনাইয়ে আমাদের কাছেই আরাধনা পান। কলকাতার বুকেই নানা মন্দির রয়েছে যেখানে একটা ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শ্যামা মায়ের আরাধনা। তেমনি হল টালিগঞ্জের করুণাময়ী কালী বাড়ি।
আদিগঙ্গার তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন কালীমন্দির । আর তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটা অশ্রুসজল কাহিনী। রাজা সাবর্ণ রায়ের পরিবারের ২৭ তম বংশধর ছিলেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। তাঁর ছিল তিনপুত্র, তাই তিনি মা কালীর কাছে এক কন্যা সন্তান প্রার্থনা করেছিলেন। মায়ের করুণায় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান লাভ করেছিলেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। কিন্তু নিয়তির বিধানে মাত্র সাত বছর বয়েসে শিশুকন্যাটির মৃত্যু হয়েছিল। ভেঙে পড়েছিলেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী।
সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। গৃহত্যাগ করার আগে স্বপ্নে দেবী কালিকা কন্যা করুণার রূপ ধরে দেখা দিয়েছিল। সে পিতাকে বলেছিল গঙ্গার ঘাটে পড়ে আছে একখণ্ড কষ্টিপাথর। পিতা যেন কষ্টি পাথরটি বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং কষ্টিপাথরটি দিয়ে দেবী কালিকার মূর্তি তৈরি করে নতুন এক মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দেবী কালিকার মূর্তির মধ্যেই বিরাজ করবে নন্দদুলাল রায় চৌধুরীর কন্যা করুণা।
কন্যা ‘করুণা’র নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মন্দির তৈরী করেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। গঙ্গার তীরে পাওয়া কষ্টিপাথর দিয়ে দেবী কালিকা ও শিবের বিগ্রহ বানিয়ে মন্দিরের ভেতরে প্রতিষ্ঠা করেন। কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি বলে মন্দিরের ভোলানাথও তাই কৃষ্ণকায়। কন্যার নামানুসারে এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম হয় ‘মা করুণাময়ী’। এই মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপর বিরাজ করছেন ‘মা করুণাময়ী’। দেবী কালিকা এখানে রায়চৌধুরী বাড়ির ঘরের মেয়ে। তাই এই মন্দিরে দেবীকে সাত বছরের কন্যা রূপেই পুজো করা হয়। কন্যা করুণা যা যা খেতে ভালবাসত, পুজোর সময় সে সবই নিবেদন করা হয় মা করুণাময়ীকে। দীপান্বিতা কালী পুজোর দিন দেবী রূপী করুণাকে স্মরণ করে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো।
এই ভাবেই কলকাতার বুকে বিরাজ করছে আরও কিছু কালী মন্দির। যেগুলো তৈরী হওয়ার পিছনে রয়েছে ঘটনার ঘনঘটা।
Discussion about this post