কথায় বলে, কোন কাজই ছোট নয়, যদি না তাতে অন্য কোনো মানুষের ক্ষতি হয়। বর্তমান লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময়ে টিকে থাকতে দ্বিতীয় বিকল্প রোজগারের পথ অবলম্বন করা এই সময়ের বড়ই সাধারণ বিষয়। তবে শুধু ই আরো ভালো থাকতে নয়, পিছিয়ে পড়া শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে বিকল্প রোজগারের পথ বেছে নিয়েছেন ওড়িশার নাগেশু। দিনের বেলায় কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি রাতের বেলায় তিনি রেল স্টেশনে কুলির কাজ করেন। মাত্র ৩১ বছরের নাগেশু পাত্র, জন্মগ্রহণ করেছিলেন ওড়িশার এক প্রত্যন্ত গ্রামে।
দারিদ্রের চাপে ২০০৬ সালে খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। পরিবারের দায়িত্ব নিতে ২০১১ সালে ওড়িশার বেরহামপুর স্টেশনে কুলি হিসেবে নিজের নাম নথিভূক্ত করেন নাগেশু। ছোট থেকেই নাগেশুর স্বপ্ন ছিল সুযোগ পেলে সে গরির ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পড়াবেন। নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি পুনরায় নিজের পড়াশোনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০১২ সালে দূরশিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। তারপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করে নাগেশু ওড়িশার গঞ্জামের বেরহামপুরে কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন।
অবশেষে করোনার সময়কালে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম পদক্ষেপ নেন নাগেশু। করোনার সময়ে যখন তার কলেজ ছিল না, তখন তিনি বিনা পয়সায় একটি কোচিং সেন্টার খোলেন। যেখানে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তিক পড়ুয়াদের পড়াতে শুরু করেন তিনি। সময়ের সাথে সাথে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়তে থাকায় তিনি আরও ৪ শিক্ষক নিয়ে নেন। কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি রাতে কুলির কাজ ও করেন নাগেশু।
সারাদিন কলেজে পড়ানোর পর দিনের শেষে নাগেশু চলে আসেন নিজের স্বপ্নের কোচিং সেন্টারে। তারপর সেখানে পড়ানোর পর সন্ধ্যায় তিনি বেরিয়ে পড়েন বেরহামপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে। নাগেশুর কথায়, “কলেজে গেস্ট লেকচারার হিসেবে মাসের শেষ তিনি পান মাত্র ৮ হাজার টাকা। সেই টাকার পুরোটাই তিনি পাঠিয়ে দেন বাবা-মাকে। তাই নিজের খরচ চালানো ও সেন্টারের শিক্ষকদের বেতনের দেওয়ার জন্যই রাতে কুলির কাজ করেন।” ওড়িশার বেরহামপুর স্টেশনের অপর একজন কুলির কথায়, বিশাল বোঝা বয়ে নিয়ে চলা নাগেশু যেন আসলে সমাজের বোঝা বইছে। সমাজ গঠনে নাগেশুর অবদান সত্যি অনস্বীকার্য।
Discussion about this post