বড়দিন, শীত, কেক আর কফির গন্ধ, উৎসব, খাওয়াদাওয়া আর চার্চের গান। চার্চ মানেই সাদা বিশাল দেওয়াল, ভিক্টোরিয়ান নকশা। ডিসেম্বর মাসটা এলেই এই সমস্তই মনে আসে। ২৫ তারিখটা যতই এগিয়ে আসে, ততই উৎসবের ব্যস্ততা বেড়ে ওঠে। ধর্ম যাইই হোক, বেড়ে ওঠে চার্চে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর শখ। সাধে কি বলে! ধর্ম যার যার, উৎসব সবার! কিন্তু লাল রঙের চার্চ?! হ্যাঁ, বীরভূমের অন্যতম প্রাচীন চার্চটি লাল বর্ণের!
বীরভূমের সদর সিউড়ি। এই সিউড়ির পশ্চিম লালকুঠি পাড়ায় অবস্থিত নর্দান ইভানজেলিক্যাল লুথারেন চার্চ বা লাল গির্জাটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। এর রঙ অন্যান্য চার্চের মত সাদা নয়। টকটকে লাল! কারণ, এই চার্চটি নাকি তৈরি হয়েছিল ইটালিয়ান স্থাপত্যের অনুকরণে। লাল হওয়ার দরুন, তাই গির্জাটি সাধারণ মানুষের কাছে ‘লাল গির্জা’ নামেই পরিচিত।
লাল রঙ হওয়া ছাড়াও, এই গির্জার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এই গির্জায় যীশুর কোনো মূর্তি নেই। কারণ, লুথারেন চার্চে কোনো মূর্তি থাকেনা, পুজো করবার জন্য থাকে শুধু ছবি। শ্রীরামপুর মিশন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বীরভূমে তাদের কাজ শুরু করেছিল। আর বীরভূম জেলায় এই ব্যপটিষ্ট মিশনের প্রধান দপ্তর ছিল সিউড়ি। ফলে এই গির্জা অবশ্যই ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
এই গির্জাটি ৩৭ শতক জায়গার উপর তৈরি হয়েছিল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৮২৫ খ্রীঃ শ্রীরামপুর থেকে রেভারেন্ড জেমস উইলিয়ামসনকে সিউড়িতে পাঠান উইলিয়াম কেরি। তিনি ডাক্তারীর পাশাপাশি মিশনারির কাজ করতেন। সিউড়িতে তিনি একটি স্কুলও চালাতেন। তাঁরাই তৈরি করলেন এই লাল চার্চ। সেই থেকেই বড়দিনের অনুষ্ঠান হয় এই লাল গির্জাতে। প্রতি বছর ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা, আর বড় দিনের সকাল ৯টায় হয় বিশেষ প্রার্থনা।
Discussion about this post