ছবি – প্রতীকী
ভিড়, দূষণ, কোলাহল এ সমস্ত কাটিয়ে নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে কে না চায়! তবে এ বিরাট পৃথিবীতে তেমন জায়গার বড়ো অভাব। কিন্তু তেমন স্থান একেবারে নেই বললে ভুল করা হবে। আর অদ্ভুতভাবে খোঁজ মিলেছে এমন এক রাস্তার, যা কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে নিশ্চুপ রাস্তা। এমনটাই ঘোষণা করেছে কিউ পি আই। এ রাস্তা হল তাইওয়ানের কুইফেং লেক সার্কুলার ট্রেইল রোড।
গোটা পৃথিবী জুড়ে একদিকে চলছে শব্দ দূষণের অত্যাচার। আর অন্যদিকে এই রাস্তা সব অত্যাচার কাটিয়ে একা যেন অপেক্ষায়। সত্যিই যেন রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ কথার এ এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এ পথের নৈস্বর্গিক অভিজ্ঞতা নিতে গেলে শুধু চোখ নয় খোলা রাখতে হবে কানও। পিন পড়লেও তা বোধহয় হয়ে উঠবে আর্তনাদের সমান। কারণ এই রাস্তা এতটাই নিশ্চুপ।
তাইওয়ানের এ রাস্তার বয়স প্রায় কয়েকশো বছর। ফলে স্থানীয়দের কাছে এ পথ রোজনামচায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে এই রাস্তার কথা দুনিয়ার কাছে প্রথম উঠে আসে কথা শব্দ প্রযুক্তিবিদ লায়লার হাত ধরে। লায়লা কিভাবে তুলে আনলেন এই রাস্তাকে? সেটাই আজ জানার বিষয়। ন্যাচারাল সাউন্ড রেকর্ডিস্ট লায়লা এই রাস্তায় মোট ৫২টি মাইক বসিয়েছিলেন। গোটা দিন জুড়ে চলা শব্দের রেকর্ড নিয়েছিলেন তিনি। আর এ পরীক্ষার ফলও পাওয়া গিয়েছিল সাংঘাতিক রকম। দেখা গেছে, মানুষের পথ চলার শব্দও শুনতে পাওয়া যায়না এই রাস্তায়।
কিন্তু এমন হবার কারণ কী? এ নিস্তব্ধ রাস্তা আসলে নিজেই কাজ করে রেকর্ডিং স্টুডিও-র মতো। প্রকৃতির এ যেন এক আশ্চর্য সৃষ্টি। এখানে সাইপ্রেস গাছের ঘন অরণ্য আর মসের আস্তরণ যেন শব্দশোষক। তারাই বোধহয় এই ঘন নিস্তব্ধতা তৈরি করার প্রধান কারিগর। জানা গিয়েছে, এই অরণ্যে সর্বোচ্চ শব্দের মাত্রা ২৫ ডেসিবেল। আর লায়লার এই গবেষণার থেকে ২০১৮ সালে কিউ পি আই এই রাস্তাকে সবচেয়ে ‘শান্ত রাস্তা’ তকমা দেয়। তখনই এ রাস্তার কথা উঠে আসে জগতের বাকি মানুষের সামনে। তবে এই স্বীকৃতি হিতে বিপরীত হতে পারে বলে ধারনা বৈজ্ঞানিকদের। জনসমক্ষে এ রাস্তার নাম উঠে আসার পরেই বাড়তে পারে পর্যটকদের ভিড়। আসলে কোলাহল ছাড়িয়ে সবাই চায় নৈঃশব্দের কোলে মাথা রাখতে। কিন্তু তাতে যে প্রকৃতিরই ক্ষতি! তাই সেদিকেও নজর রাখছে তাইওয়ান প্রশাসন।
Discussion about this post