সাতক্ষীরার মাদুর শিল্প বাংলাদেশের একটি অনন্য ঐতিহ্য। এই শিল্প শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বসা কিংবা ঘুমানোর জন্য গ্রাম বাংলায় ব্যবহার হয় মাদুর। তবে সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মাদুরের ব্যবহার এখন অনেকটাই কমছে। ফলে এই শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। একসময় সাতক্ষীরার তৈরি মাদুর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা হত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কাঁচামালের অভাবে এখন এই শিল্প বিলুপ্তির পথে।
সাতক্ষীরার মাদুর শিল্পের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। মনে করা হয়, ব্রিটিশ আমল থেকেই এই শিল্পের প্রচলন শুরু হয়েছে। তখন সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মেলে ঘাস পাওয়া যেত। এই মেলে ঘাস দিয়েই তৈরি করা হত মাদুর। তবে বর্তমানে মেলে ঘাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না বলে জানায় এখানকার স্থানীয় লোকজন। আশাশুনি উপজেলার যদুয়ারডাঙ্গী গ্রামের তারাপদ মন্ডল জানান, “বর্তমানে মেলে চাষ না হওয়ায় মাদুর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আগে সপ্তাহে ২০০ থেকে ২৫০ জোড়া মাদুর তৈরি হত। সেখানে বর্তমান সপ্তাহ জুড়ে ৮ থেকে ১০টি মাদুর তৈরি হচ্ছে। ফলে মেলে সংকটের কারণে এ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।”
এছাড়াও প্লাস্টিকের মাদুর বাজারে আসার ফলে হাতে তৈরি মাদুরের চাহিদা কমে গেছে। কারণ হাতে তৈরি মাদুরের তুলনায় প্লাস্টিকের মাদুরের দাম অনেকটাই কম। মাদুর ব্যবসায়ী কওছার আলীর থেকে জানা যায়, “প্লাস্টিকের তৈরি একটি মাঝারি আকারের মাদুর বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। অন্যদিকে একটি মেলের তৈরি মাদুরের দাম পড়ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। ফলে ক্রেতারা আর হাতে তৈরি মাদুর কিনছেন না।”
সাতক্ষীরার আশাশুনির তেতুলিয়া গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবার দুই দশক আগেও মাদুর তৈরির সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার মাদুর তৈরি করে। এখানকার একজন মাদুর শিল্পীর থেকে জানা যায়, এখন মাদুর তৈরি করে তাদের তেমনভাবে লাভ হয় না। শুধুমাত্র বংশ পরম্পরার কারণে পেশাটি এখনও ধরে রেখেছেন তিনি। তাছাড়া নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আগ্রহী নয়, ফলে দক্ষ কারিগরের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। সরকার যদি ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেয় তাহলে এই শিল্পকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা সম্ভব। তা না হলে সাতক্ষীরা থেকে শিল্পটি খুব তাড়াতাড়ি বিদায় নেবে।
চিত্র ঋণ – অপরাজেয় বাংলা, Jagonews24, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
Discussion about this post