আজ থেকে একশো বছর আগের কথা। সাল ১৯২১। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে খুব গুরত্বপূর্ণ একটা বছর। চারদিকে তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার লড়াই। সেই লড়াইয়ের প্রভাব এসে পড়েছিল হাওড়ার বাগনান অঞ্চলেও। সেই সময়ে বাগনানের বাঙালপুরে বিপ্লবীদের নেতৃত্বে ছিলেন বিভূতিভূষণ ঘোষ। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য শক্তির আরাধনার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। দ্বীপান্বিতা অমাবস্যার দিন গ্রামের সকলকে নিয়ে আয়োজন করেছিলেন কালী পুজোর। সেই পুজোই এখন এলাকার শতবর্ষব্যাপী বারোয়ারি পুজো।
বিভূতিভূষণ ঘোষ ছিলেন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন এক ব্যক্তি। তিনি যেমন পুলিশ ও ব্রিটিশ বাহিনীর গোপন খবর বিপ্লবীদের জানতেন, ঠিক তেমন উপযুক্ত সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হতেন না। আসলে ১৯২১ সালে পুজোর মাধ্যমে তিনি জড়ো করেছিলেন তার বিপ্লবী সহযোগীদের। সাহায্য করেছিলেন তাদের আত্মগোপনেও। তার পরামর্শে সেই পুজোর দায়িত্বে ছিলেন জীবন কৃষ্ণ ঘাঁটি, সাতকড়ি ঘোষ, জীবন কৃষ্ণ বসু, প্রভাত ঘোষ, দাশরথি ঘোষ, সনৎ ঘোষ প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব। আজও তাই তাকে স্মরণ করে গ্রামবাসীবৃন্দ মেতে ওঠেন শক্তির আরাধনায়। আজ একশো এক বছরেও অমলিন এই পুজোর মাহাত্ম্য। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে বাঙালপুর বয়েজ ক্লাবের সদস্যরা।
এই পুজোয় প্রতিমার কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিমা নির্মাণ সবটাই হয় পুজো মণ্ডপে। এলাকার মহিলারা প্রতিমাকে সোনা রূপোর গয়নায় সাজিয়ে তোলেন। আসলে বাগনানের বিপ্লবী নেতা ছিলেন একেবারে গ্রামের ছেলে। গ্রামের সকলকে এক ছাদের তলায় আনার জন্যই শুরু করেছিলেন এই কালী পুজো। তাই আজও একতা বজায় রেখে গ্রামের সকলে কালী পুজোর দিন মেতে ওঠেন পুজোর আনন্দে।
চিত্র ঋণ – বুনো মাধব
Discussion about this post