মহামারির জেরে গত বছর থেকেই শিক্ষাব্যবস্থার ডামাডোল দশা। বাতিল হচ্ছে একের পর এক পরীক্ষা। ছাত্র শিক্ষকের দেখা সাক্ষাৎও দূর অস্ত। কিন্তু এদিকে শিক্ষাকর্মীদের মাসিক বেতনে নেই কোনো হেরফের। ক্লাস না করেই মাসান্তে পাচ্ছেন বেতন। শিক্ষকদের তাই হামেশাই সহ্য করতে হচ্ছে সাধারণের কটাক্ষের তীর। কিন্তু সেইসব কটু কথাকে হজম করেই এগিয়ে এলেন এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা। সাহায্যের ঝুলি ভরে স্বেচ্ছায় দাঁড়িয়ে পড়লেন করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে।
জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের মান্তাদারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কেয়া সেন। বিগত দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ হলেও সরকারি স্কুল শিক্ষিকা হওয়ায় তাঁর আয়ে ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু চারিদিকে তখন না খেতে পাওয়া মানুষের ভিড়। অ্যাম্বুলেন্স অক্সিজেনের অভাবে রুগীর রোজকার মৃত্যু। এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে বিনা পরিশ্রমে উপার্জন যেন তাঁর কাছে অমানবিকতার পরিচয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন সাধারণের জন্য অ্যাম্বুলেন্স কেনার। আর সেইমতো ৭ লাখ টাকা খরচ করে কিনে ফেলেন একটি অ্যাম্বুলেন্স। সাধারণের সুবিধার্থে তা তুলেও দেন ‘শ্রদ্ধা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। ভাইরাসের কবলে পড়া মানুষকে যাতে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে আর অপেক্ষা করতে না হয় তার জন্যই এই পরিষেবা। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ সানন্দে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাটি চালু করেন। ২৪ ঘন্টাই বিনা পয়সায় এই অ্যাম্বুলেন্স মারফৎ পরিষেবা দেওয়ার আস্থা দিয়েছে সংস্থা।
ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউতে টালমাটাল দেশে রোজকার মৃত্যু মিছিলে একরকম বিধ্বস্ত মন। আর এই পরিস্থিতিতেই চলছে কিছু স্বার্থলোভীর কালোবাজারি ব্যবসা। অ্যাম্বুলেন্স থেকে অক্সিজেন, চড়েছে মাত্রাতিরিক্ত দাম। তার তাতে হিমশিম খাচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ। এই অবস্থায় শিক্ষিকার এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি স্থানীয়রা। এই দুর্দিনে তাঁর এই মানবিকতাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে গোটা বাংলা।
Discussion about this post