প্রতিদিনের বাসযাত্রা মানেই যাত্রীদের কোলাহল সঙ্গেই বাসের কন্ডাক্টরের কড়া ব্যবহার। যাত্রীদের সঙ্গে বচসায় অনেকেই বিরক্ত হয়ে গিয়ে যাত্রীদের দু’কথা শুনিয়ে দিতেও ছাড়েন না অনেক কন্ডাকটর। তবে, শহর কলকাতার করুণাময়ী থেকে যাদবপুরগামী AC-9 রুটের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা কিন্তু কলকাতার বাকি বাসের যাত্রীদের থেকে অনেকটাই আলাদা। এই রুটে একজন এমন কন্ডাক্টর রয়েছেন, যিনি নিজের আচরণ ও শালীনতায় যাত্রীদের মুগ্ধ করে দেন প্রতিদিন। এই কন্ডাক্টরের নাম তন্ময় মাহাতো। তিনি এতটাই শালীন এবং বিনয়ীভাবে যাত্রীদের স্টপেজের ঘোষণা করেন প্রতিদিন, যেন তিনি কোনো একজন পেশাদার গাইড। প্রতিটি স্টপেজের আগে কোন এলাকায় নামলে কোন জায়গায় যেতে সুবিধা হবে, তা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তিনি যাত্রীদের জানাচ্ছিলেন। আর এই বিষয়টা কলকাতার বাসে রীতিমতো বিরল।
তন্ময় মাহাতো ব্যক্তি হিসেবে একেবারেই অন্যরকম। তার প্রতিটি ঘোষণা এবং যাত্রীদের প্রতি তার আচরণে ফুটে ওঠে সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার ভাব। যাত্রীরাও তার প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, কারণ তার কথা বলার ভঙ্গি এবং সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিক। তবে শুধু যাত্রীদের জন্য সহমর্মিতার ভাব প্রকাশই নয়, মানবিকতার জন্যেও তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
তাদের বাসের এই রুটটি অনেকটাই দীর্ঘ। সেই রুটে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে কিছু স্কুলের ছোট ছাত্রছাত্রী বাসে ওঠে। প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার জন্য এই AC-9 বাসটাই তাদের ভরসা। ছেলেমেয়েগুলো যখন ভাড়া দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়, তখন তন্ময় তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা ভালোভাবে পড়াশোনা করো। আজকের ভাড়ার টাকা দিয়ে কাল টিফিন খেয়ে নিও।” কন্ডাক্টরের এই কথায় বাচ্চাগুলোর মুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর এই ঘটনা দেখে অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যেও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়।
একজন যাত্রী কৌতূহলী হয়ে কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করেন, “কেউ তো এক পয়সাও ছাড়তে চায় না, আর আপনি এই ছেলেমেয়েদের ভাড়া ছেড়ে দিলেন কেন?” উত্তরে তন্ময় বলেন, “অনেক বাচ্চাই কষ্ট করে পড়াশোনা করে। তাদের জন্য এই একদিনের ভাড়ার টাকাও অনেক বড়। হয়তো এদের মধ্যে কেউ একদিন বড় হয়ে সমাজের অন্যদের সাহায্য করবে।” কন্ডাক্টরের এই বক্তব্য ও তার আচরণই সবাইকে মুগ্ধ করে। তন্ময় মাহাতো একজন সাধারণ বাস কন্ডাক্টর হলেও তার এই মানবিকতা এবং যাত্রীদের প্রতি দায়িত্ববোধ তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। তার মতো একজন মানুষ আজকের সমাজে এক বিরল উদাহরণ।
Discussion about this post