ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই রবি ঠাকুর উঠে পড়তেন ঘুম থেকে। তাঁর সবসময়ের সঙ্গী বনমালী সূর্য ওঠার আগেই তাঁর জন্য চা করে আনত। সেই চা খেয়েই লেখায় মগ্ন হয়ে যেতেন গুরুদেব। আশেপাশের দু-চারজন আসর জমাতে জড়ো হতেন বেশিরভাগ দিনই। গুরুদেব তাঁদের অপেক্ষায় বসে থাকতেন। তাঁরা এলে নিজের হাতে চা ঢেলেও খাওয়াতেন। খেতে এবং খাওয়াতে দুটিই গুরুদেব ভীষণ ভালোবাসতেন।
সকালবেলাটায় মানুষ ছাড়াও আরও নানা প্রাণীর দেখা মিলত তাঁর আশেপাশে। তাঁর বাগানে ছিল একটি ময়ূর। সকালে কবি যখন চা খেতেন, ময়ূরটি তাঁর সামনে এসে বসে থাকত। ময়ূরটিকে দেখে আশেপাশের সবাই ভয় পেত। কাছাকাছি থাকত না কেউই। একমাত্র গুরুদেব কী সুন্দর চুপ করে বসে মুগ্ধ হয়ে ময়ূরটির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। ময়ূরটিও দেখত তাঁকে। কত মিনিটই যে কেটে যেত এইভাবে তার ইয়ত্তা নেই। এছাড়াও লালু নামের একটি পোষা কুকুর ছিল তাঁর। সে ছিল এক দেশী কুকুর। সারাদিন তার পাত্তা না পাওয়া গেলেও, খাওয়ার আগে ঠিক এসে হাজির হত গুরুদেবের কাছে। গুরুদেব তখন তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন। লালু চুপ করে বসে লেজ নাড়ত। গুরুদেব পাঁউরুটিতে মাখন লাগিয়ে লালুকে খেতে দিতেন। শান্ত হয়ে বসে খেত লালু। কিন্তু বনমালী লালুকে খুব একটা পছন্দ করত না। কোনো-কোনওদিন এমনও হয়েছে লেখায় ডুবে গেছেন গুরুদেব। লালু এসে অভ্যাসমত বসে, কিন্তু সেদিকেও তখন খেয়াল নেই গুরুদেবের। তখন বনমালীই লালুকে ডেকে মাখন ছাড়া শুকনো রুটি খেতে দিত। গুরুদেবের সাড়া না পেয়ে কোনও রকম আপত্তি না জানিয়ে, মাখন ছাড়া রুটিই খুশি মনে খেয়ে নিত লালু। এমনকি তাকে নিয়ে গুরুদেব কবিতাও লিখেছিলেন।
এ ছাড়াও রোজ নানা পাখি এসে বসত তাঁর চাতালে। কাক, শালিক, পায়রা, ঘুঘু সে কত পাখির মেলা! তাদের সামনে ধান, চাল, মুড়ি ছড়িয়ে খেতে দেওয়া হত রোজ। তাই শুধু তাঁর অগণিত ভক্তদের নিয়েই নয়, এভাবেই পশু-পাখিদের মাঝে প্রতিদিন সকাল শুরু হত গুরুদেবের। তাদের নিয়েই এভাবে প্রতিটা দিন কেটে যেত তাঁর।
তথ্য ঋণ – সাবর্ণ
Discussion about this post