সরস্বতী পুজোর সকাল। বেলা বারোটা ছুঁইছুঁই। আলী সাহেব তখন গঙ্গার ঘাটে পায়চারি করতে বেরিয়েছেন। এক বৃদ্ধা হঠাৎ ছোট্ট নাতনির হাতটি ধরে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন তাঁর দিকে। উজ্জ্বল বর্ণ শান্ত সুন্দর এক চেহারার মানুষ ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তাই চেহারা দেখে তাঁকে পুরোহিত ভেবে বসলেন বৃদ্ধা। কিছু না জেনেই বৃদ্ধার আর্জি, “বাবা আমার বাড়ির পুজোটা করে দাও। পুরুত আসেনি এখনও, আমি পুরুত খুঁজতে বেরিয়েছি। বাচ্চাটা না খেয়ে অঞ্জলি দেবে বলে বসে রয়েছে।”
আলী সাহেব পড়লেন বিপাকে। আলী সাহেবের পক্ষে সংস্কৃতপাঠ কোনো বড় ব্যাপারই ছিল না। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর ছাত্র। সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, জার্মানী ও ইতালী সহ পনেরোটি ভাষা ছিল তাঁর নখদর্পনে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল ধর্ম। পিতৃধর্ম নাকি মানবধর্ম স্থির করতে একরকম হিমশিমই খেলেন তিনি। তখনই চোখ গেল ছোট্ট মেয়েটার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে। অকপটে রাজি হয়ে গেলেন পুজো করতে।
বৃদ্ধার বাড়িতে পুজোর জোগাড় তখন সম্পূর্ণ। সৈয়দ মুজতবা আলী বসে পড়লেন পূজারীর বেশে। নির্ভুল সংস্কৃত মন্ত্রপাঠে করলেন বাণী বন্দনা। বাড়ির লোকজনও বেজায় খুশি। উপযুক্ত দক্ষিণাও পেয়ে গেলেন আলী সাহেব। কিন্তু এক বিধর্মীর হাতের পুজো দেবীর কাছে পৌঁছলো কিনা এই দ্বন্দ্বে পড়লেন তিনি। পরে তাঁর এক স্বীকারোক্তিতে বলেন, “জানিনা মা সরস্বতী এই বিধর্মীর পূজায় অসন্তুষ্ট হলেন কিনা! তবে আশা করি তিনি উপোসী বাচ্চাটির শুকনো মুখের দিকে চেয়ে এই অধমকে ক্ষমা করবেন।”
Discussion about this post