মোবাইল স্ক্রিন, ম্যাগাজিনের পাতায় সাসটেনেবল অভ্যেসের মতো শব্দবন্ধে প্রায়শই চোখ আটকায়। সাসটেনেবল কথার অর্থ স্থিতিশীলতা বা কোনও কিছুর স্থায়িত্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টা। মনে হতে পারে এই প্রয়াসের হঠাৎ এত বাড়বাড়ন্ত কেন। কারণ স্থিতিশীল অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন না হলে আমাদেরই দ্বারা তৈরি হওয়া অপচনশীল বর্জ্য পদার্থের পাহাড় প্রমাণ ভারে প্রিয় ধরিত্রী হাঁসফাঁস করবে সামনের দশ বছরেই। পরিবেশবিদদের কথায় এখনও সতর্ক না হলে ২০৩১ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ভারতে অবিয়োজ্য আবর্জনার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬৫ মিলিয়ন টন!
দেশের আটশো কোটি মানুষ, লাখ লাখ কল কারখানা ও তার দ্বারা উৎপন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন অবিয়োজ্য কাপড়, প্লাস্টিক, কাঁচ, রাসায়নিক রঙ তার ব্যবহারিক ক্ষমতা হারাবার পর অপচনশীল পদার্থে পরিণত হচ্ছে ও জমা হচ্ছে পৃথিবীর মাটিতে। এগুলি রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তার সাথে ভোগসর্বস্ব ও প্রদর্শন সর্বস্ব জীবনে আত্মতুষ্টির পথ থেকে কিছুটা সরে এসে পরিবেশ বান্ধব জিনিসের ব্যবহার ও মননশীল ক্রয় এই দুটি সচেতন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরাও তো নিতেই পারি। তাহলে এই ধরণীর বায়ু, জল, মাটির আয়ু হবে সুদীর্ঘ। আর এটাই হল সাসটেনেবল লিভিংয়ের মূল মন্ত্র।
প্রথমেই, রেয়ন, সিন্থেটিকের জায়গায় বেছে নিতে হবে খাদি, ব্যাম্বু কটন, হেম্প, সাধারণ কটন, লিনেন, সিল্ক কাপড়ের তৈরি পোশাক। এগুলি প্রাকৃতিক তন্তু, পরিবেশ বান্ধব, ত্বকবান্ধব, ভারতীয় আবহাওয়া উপযোগী আর বর্তমানে জনপ্রিয়তার কারণে পকেট বান্ধব ও সহজলভ্য। প্লাস্টিকের কাপ, প্লেটের বদলে মাটির বা কাগজের ভাঁড়, কাগজ বা শালপাতার প্লেটের ব্যবহার, বাইরে খাওয়ার জন্য স্টিল বা কাঠের তৈরি স্ট্র, চামচ সঙ্গে রাখার অভ্যেস করলে কমিয়ে আনা যাবে প্লাস্টিক দ্রব্যের চাহিদা, ব্যবহার ও উৎপাদন। মার্কেটে গেলে সাথে কাপড়ের ব্যাগ রাখলে বাইরের প্লাস্টিক, পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ প্রসাধনী সামগ্রী কেনা ও ব্যবহার একই সাথে আমাদের ত্বক ও পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষা করবে। এছাড়া স্থানীয় ফল সবজি খাওয়া, জৈব চাষ পদ্ধতি গ্রহণ, সোলার এনার্জির আরও বেশি ব্যবহার, বিয়োজ্য ও অবিয়োজ্য পদার্থ সম্পর্কে ধারণা, কম্পোস্ট বিনের সঠিক ব্যবহার, ব্যবহৃত জিনিসের পুনর্ব্যবহারের মতো অভ্যেস সামগ্রিকভাবে সুফল এনে দেবেই।
সাসটেনেবল লিভিং একটি মানসিক চেতনা যার নিয়মিত অনুশীলন প্রয়োজন। মহাবিশ্বের মহাশূন্যে একমাত্র পৃথিবীর বুকে প্রাণের অস্তিত্ব একটা ম্যাজিক বৈকি। নিজ দোষে সেই ম্যাজিকের আয়ু কমানো নিজের পায়ে কুড়ুল মারার সমান বিপদজনক। তাই নিজের, প্রকৃতির ও ভবিষ্যতের স্বার্থে প্রকৃতির সাথে এই সহাবস্থান আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একান্ত প্রয়োজনীয়।
Discussion about this post