কান পাতলেই আজ মেয়েদের থেকে একটা কথা শোনা যায়, উইম্যান পাওয়ার। আজকের যুগে মেয়েদের পথচলাটা তো অনেকটা সহজ হয়েছে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন মেয়ে মানেই ঘরবন্দী এক সত্ত্বা। তার প্রাণ আছে, কিন্তু সজীবতা নেই। নিজের ইচ্ছে নিজের স্বপ্ন এসব ভাবাও ছিল পাপ। মেয়েদের জীবনশৈলী তখন শুধুই পরিবারের স্বার্থে। কিন্তু সেই যুগের মাটিতে জন্মেও, সমাজের বিপরীতে হেঁটে কিছু নারী আজ সফল হয়েছেন। চলুন তবে, তেমনই এক নারীর জীবনদর্শন করানো যাক। সম্ভ্রান্ত রক্ষণশীল পরিবারের বৌ হয়েও, যিনি নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাফল্যের সংজ্ঞা!
সুপ্রিয়া দেবীর বয়স তখন মাত্র ১৩। বিয়ে হল কাশিমবাজারের রাজবাড়িতে। আর তৎকালীন রাজবাড়ি মানেই রক্ষণশীলতা সংস্কার এসবের মাত্রাতিরিক্ত পালন। ১৪বছরেই কোলে এল ফুটফুটে সন্তান। এসবের মধ্যেও কোথাও যেন হারিয়ে ফেলছিলেন নিজেকে। তাই আবদার করে বসলেন শ্বশুরমশাইয়ের কাছে, পড়াশোনা শুরু করবেন। বৌমার আবদার রাখলেও আদেশ ছিল, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কোনো কাজ নয়। অগত্যা, বাড়িতেই মাস্টারমশাই দিয়ে শুরু হল পড়াশোনা। বৃত্তি পেয়ে গ্র্যাজুয়েশনও শেষ করলেন বাড়ি বসেই। ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস ফ্লাওয়ার মেকিং’ প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং নেওয়া শুরু করলেন। তবে সেখানে বাড়ির বৌয়ের সাথে যাতায়াতের জন্য লোক নির্দিষ্ট ছিল।
এরপরই এল তাঁর জীবনের আসল অধ্যায়। ছোট থেকে ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠায় তিনি স্বপ্ন দেখতেন নিজের ব্যবসার। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, এবার সময় স্বপ্ন সত্যি করার। শ্বশুরমশাইয়ের আদেশ রেখে, বাড়িতে থেকেই হাঁটা দিলেন স্বপ্নের পথে। শুরু করলেন কুকারি ক্লাস। স্বাবলম্বী হওয়ার রাস্তায় ৭০ টাকা ছিল প্রথম উপার্জন। নিজের দশ বছরের উপার্জিত অর্থেই ১৯৯০ সালে বাজারে আনলেন ফাস্টফুড ও কেকের এক দোকান। বয়স তখন ৩৬ পেরিয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন যে ছিল আকাশ ছোঁয়া। ধীরে ধীরে গড়ে তুললেন কনফেকশনারিজের ব্যবসা। যার নাম শুনলে কিছুটা অবাকই হবেন। ‘সুগার অ্যান্ড স্পাইস’, মফঃস্বল থেকে শহর আজ এই দোকানের শাখা সর্বত্র। সেই জনপ্রিয় ব্রান্ডেরই কর্ণধার হলেন সুপ্রিয়া রায়। এক রক্ষণশীল বাড়ির গৃহবধূ থেকে ব্যবসার জগতের ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার সেই লড়াইটা মোটেও কোমল ছিলনা। তবে পাশে পেয়েছেন তাঁর স্বামীকে। যিনি প্রতি মূহুর্তে তাঁকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তবে এসবের মধ্যে কখনো খামতি হয়নি সাংসারিক দায়িত্বে। স্বামী সন্তানের প্রতি ছিলেন বরাবর যত্নশীল।
কথায় বলে “যে মেয়ে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।” আর সেটিকেই জীবনের নীতিবাক্য করে ফেলেছিলেন সুগার অ্যান্ড স্পাইসের কর্ণধার সুপ্রিয়া দেবী। ছোট থেকেই কেক তাঁর ভীষন প্রিয় খাবার ছিল। তাই জীবনের রসদটাও তিনি এই কনফেকশনারিজের ব্যবসায় খুঁজে নিয়েছেন। আজ সুগার অ্যান্ড স্পাইস একটি ব্রান্ড, যেটি প্রায় ২০০ কর্মচারীর অন্নসংস্থানের কেন্দ্র। আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এক সফল মহিলা ব্যবসায়ীর তালিকায় তাঁর নাম জ্বলজ্বল করছে।
Discussion about this post