প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় থেকেই তিনি গ্রীক, লাতিন সহ নানা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলিতে কৃতিত্ব লাভ করেন। ‘দ্য অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ দি বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামে পরিচিত এই বই সুনীতিকুমারকে দেশ বিদেশে পরিচিতি দিল। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ‘বাংলাভাষা পরিচয়’ বইটির উৎসর্গ পত্রে সুনীতিকুমারকে দিলেন ‘ভাষাচার্য’ উপাধি। তিনি তার সন্তান তুল্য ছাত্র ছাত্রীদের এবং নিজের সন্তানদেরও জীবনে এগিয়ে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তার বৌমাকেও বলতেন “শ্বশুরবাড়িতে সম্রাজ্ঞীর মত বিরাজ করো।”
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভালোবাসতেন বিভিন্ন দেশের খাবার চাখতে। ভালোবাসতেন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে। এই বাঙালি যখন গাধায় চড়ে গ্রীস ভ্রমণ করেন তখন খাবার বলতে তার কাছে ছিল কয়েক টুকরো রুটি আর রাস্তা লাগোয়া গাছের ফল। পৃথিবীতে বিস্ময়ের বস্তু বহু কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর হল মানুষ। এহেন বিস্ময়কর মানুষ সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের বড় মেয়ে অনিন্দিতার বিয়েতে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে হাজির সবাইকে একটি বিশেষ আলোচনায় সামিল করেছিলেন।
বিয়েতে অতিথি ভোজনের দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত ক্যাটারিং সার্ভিস বিজলী গ্রিলস। ১৯৭৫ এর ফেব্রুয়ারি মাসের কথা।সুনীতিকুমার তার ভাষার খেলা শুরু করলেন। খেলার সাথী হলেন ক্যাটারিং ম্যানেজার। বিয়েতে ভেটকি মাছের একটি বিশেষ পদ ফিস ওরলি হয়েছিল। সেই খাবারটি খেয়ে তিনি প্রথম প্রশ্নবানটি ছুঁড়লেন ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে। ফিস ওরলি কোন দেশের খাবার এবং এর উৎপত্তি কোথায়? এলোই বা কোথা থেকে? ম্যানেজার ভদ্রলোক বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। সুনীতিকুমার অনেক দেশ ঘুরেছেন কিন্তু এমন খাবার তিনি কখনো খাননি। বিশেষত ভেটকি মাছকে ভাজা হয়েছিল এক বিশেষ উপায়ে। তিনি খাওয়া বন্ধ করে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি বিভিন্ন দেশে যে ভিন্ন স্বাদের এবং ভিন্ন নামের মাছভাজা খেয়েছেন তাদের এক এক করে নাম বলতে শুরু করলেন। উপস্থিত সকলের মাঝে ব্যস্ত হয়ে হঠাৎই নারায়ণ সান্যালের মেজ দাদা বলে উঠলেন, “আপাতত খাবারটি এলো রান্নাঘর থেকে। যে নামই হোক না কেন আসল কথা হল মাছ ভাজা।” সুনীতিকুমার তার কথা শুনে হেসে উঠে নিজের খাবারের প্রতি মন দিলেন। উপস্থিত সকলের ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। ফিস ওরলিও নিমন্ত্রিতদের সামনে পরিবেশিত হতে লাগল
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শুধুমাত্র বাংলার ঘেরাটোপেই যেহেতু আটকে থাকতে চাননি। তিনি তার শেষ জীবন পর্যন্ত ভাষার খেলা চালিয়ে এসেছেন। মানবসভ্যতার সামগ্রিক চর্চাতেই তিনি পেয়েছিলেন মুক্তি।।
Discussion about this post