নববর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই চারিদিকে বইছে খুশির হাওয়া। ঈদের খুশির জোয়ারে ভাসছে এপার-ওপার, দুই বাংলা-ই। আর এই উৎসবে প্রত্যেক মসজিদের প্রাঙ্গণ থাকে একেবারে দেখার মতন। শ্বেত-শুভ্র বস্ত্রের চাদরে ঢেকে যায় মসজিদ চত্বর। এককথায় ঈদের দিনের আমেজ শুরু হয় এই মসজিদ চত্বর থেকেই। ঠিক তেমনই এক নিদর্শন হল সুনামগঞ্জ জেলার পাগলা বড় জামে মসজিদ। মহাশিং নদীর তীর ঘেঁষে স্বমহিমায় দাড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি অবস্থিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলার রায়পুর গ্রামে। এটি স্থানীয়ভাবে ‘রায়পুর বড় মসজিদ’ নামেও পরিচিত। কী অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ! মূলত এটির জন্যই বিখ্যাত এই মসজিদ।
ইয়াসিন মির্জা নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিভিন্ন জায়গার নানা স্থাপত্যশৈলী দেখে তিনি এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে টানা ১০ বছর পর পূর্ণতা পায় এটি। সেসময় কলকাতা ও দিল্লি থেকে আনা হয়েছিল স্থপতি ও নির্মাতা। শুধু তাই নয়, মসজিদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়াতে তাজমহল তৈরিতে যেসব পাথর ব্যবহৃত হয়েছিল সেই পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই নিদর্শন। মসজিদের ভিতরটি দেখে এক মুহূর্তে মনে হতে পারে সত্যিই বোধহয় সিলেটে অবস্থিত এক অন্য তাজমহল! সামনে বিশাল ঈদগাহ ময়দান ও উত্তর দিকের প্রবেশপথের সামনে নিয়ে বয়ে চলেছে মহাশিং নদী।
তিনটি গম্বুজ ও ছ’টি সুউচ্চ মিনার বিশিষ্ট মনকাড়া অপূর্ব মসজিদটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০ মিটার ও প্রস্থে ১০০ মিটার। প্রত্যেক প্রবেশদ্বারে রয়েছে পাথরখচিত খিলান, যা মসজিদটিকে বেশ উঁচুমানের স্থাপত্যশৈলীর খেতাব অর্জনে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি ছাদ ও গম্বুজের চারপাশে পাথর খোদাই করা পাতার নকশা গ্রামীণ ঐতিহ্যের জানান দেয়। এবার যে বিষয়টি জানলে অবাক হতে বাধ্য সেটি হল দু-তলা বিশিষ্ট এই নিদর্শনটি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোনো ধরনের রডের সাহায্য ছাড়াই। সম্পূর্ণ ইটের উপর।
এখন মনে হতে পারে রড ছাড়া এমন এক স্থাপত্য প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে এত বছর টিকে রয়েছে কীভাবে! আসলে নির্মাণকালে অতি দক্ষতার সঙ্গে বেশ অনেকটা মাটি খুঁড়ে মজবুত পাত বসিয়ে তার ওপর ভিত তৈরি হয়েছিল মসজিদটির। তাই অনেকগুলো ভূমিকম্প এখনও পর্যন্ত টলাতে পারেনি। সেযুগে প্রায় ১০লাখ টাকা ব্যয় করে তৈরি হয়েছিল প্রাচীনতম এই পাগলা মসজিদ। আজও এই মসজিদটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে রাজকীয় মহিমায় অপেক্ষা করে থাকে নতুন একেকটা ঈদের।
Discussion about this post