৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহ। প্রথম দিনটি হল গোলাপ দিবস। ভালোবাসার মানুষকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালবাসার উদযাপন। প্রাচীনকাল থেকে গোলাপ ফুলকে ভালবাসার প্রতীক, প্রেমের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে এসেছে। মোগল বেগম নুরজাহান লাল গোলাপ ভালোবাসতেন। তাঁকে খুশি করার জন্য নাকি জাহাঙ্গীর প্রতিদিন গোলাপ উপহার পাঠাতেন। রানী ভিক্টোরিয়ার সময় মানুষ মনের কথা প্রকাশের জন্য গোলাপ ব্যবহার করত। সম্ভবত এইসমস্ত ঐতিহ্যকে বজায় রাখার জন্যই ভ্যালেন্টাইনস সপ্তাহের প্রথম দিন পালন হয় গোলাপ দিবস।
যুগ যুগ ধরে গোলাপ ভালোবাসার আদানপ্রদান করে এসেছে। কিন্তু অনুরোধের আদানপ্রদান? হ্যাঁ, তাও করেছে এই বাংলাতেই। গোলাপের তোড়ার একপাশে রাজ কপুর এবং অন্যপাশে বাংলার আট থেকে আশির হার্টথ্রব সুচিত্রা সেন। সত্তরের দশকে বাংলার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সকলেই এক বাক্যে সুচিত্রা সেনের নাম বলবেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন ছোট বড় সব ধরণের পরিচালকেরা। হিন্দি ছবির পরিচালকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। ফলে বাংলা ছবির পাশাপাশি বেশ কিছু হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে সুচিত্রা সেনকে।
এই মহানায়িকাকে নিজের ছবিতে কাজ করানোর অনুরোধ নিয়েই সুচিত্রা সেনের বাড়িতে এসেছিলেন হিন্দি ছবির আর এক হার্টথ্রব রাজ কপুর। হাতে ছিল গোলাপের তোড়া। সুচিত্রা সেনের ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বাংলার মানুষ ভালভাবেই অবগত আছেন। প্রফেশনাল জীবনে ছবির বন্ডে সই করার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত খুতখুঁতে। ফলে মুম্বাই থেকে কলকাতা এসে, পায়ের কাছে বসে গোলাপের তোড়া রাখলেও, স্বয়ং রাজ কপুরকেও নাকচ করে দেন সুচিত্রা সেন। খালি হাতেই ফিরেছিলেন রাজ কপুর। সুচিত্রা সেনের নিজের কথায়, “পুরুষদের মধ্যে আমি রূপের খোঁজ করি না। আমি বুদ্ধিমত্তা এবং তীক্ষ্ণ বার্তালাপ পছন্দ করি। আমি প্রায় তৎক্ষণাৎ রাজ কাপুরের অফার রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। উনি নায়িকার চরিত্রের অফার নিয়ে আমার বাড়ি এসেছিলেন।”
রাজ কপুর গোলাপ নিয়ে পায়ের কাছে বসে পড়ায়, সেটিকে ভাল চোখে দেখেননি সুচিত্রা। পরবর্তীকালেও তিনি রাজ কপুরের সঙ্গে কাজ করেননি। যে রাজ কপুরের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলিউডের বাঘা বাঘা অভিনেত্রীরা সুযোগের অপেক্ষা করতেন, সেই রাজ কপুরকেই ফিরিয়ে দিতে দুবার ভাবেননি সুচিত্রা সেন। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি সত্যজিৎ রায়ের কাজের অফারও ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে শেষপর্যন্ত গোলাপ ফুল ভালোবাসা ছড়াতে পারলেও, সুচিত্রা সেনের স্বাতন্ত্র্য আর ব্যক্তিত্বের কাছে তাকে মাথা নোয়াতেই হয়েছিল।
Discussion about this post