নিজেদের সাজের সঙ্গে ঘর সাজানোর ঝোঁক পরিচয় দেয় এক অন্যরকম রুচির। আর ঘর সাজাতে হরেক রকম জিনিস পাওয়া যায় হাতের কাছেই। তবে বর্তমানে ঘর সাজাতে বেশ ব্যবহার করা হয় চিনেমাটির জিনিস। যার পোশাকি নাম সেরামিক। এ জিনিস দেখতে বেশ সুন্দর। শৌখিনতা বাড়িয়ে তুলতে এর জুড়ি নেই।
চিনেমাটি বা সেরামিক আসলে অধাতব যৌগ। অক্সাইড, কার্বাইড ও নাইট্রাইটের সমন্বয়ে তৈরি এই সেরামিক। যার প্রধান উপাদান হলো বালি। তবে এমন পদ্ধতিতে এ জিনিস তৈরি হয় যে বালির আলগা ভাব আর থাকে না। তবে এটা ঠিকই যে জিনিসটা ভঙ্গুর। এতে খুব বেশি জোর দিলে চলে না। কিন্তু জলে বা গরমে এর ক্ষতি হয় না। আর সেরামিকের তৈরি জিনিসগুলো বেশ চকচক করতে দেখা যায়। এই চকচক করার কারণ হলো গ্লেজ বা চাকচিক্য।
সাঁতরাগাছির কাছে বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার আগেই একটা রাস্তা ঘুরে গেছে ডানদিকে। এ রাস্তায় গেলেই চোখে পড়বে সার দিয়ে সাজানো রয়েছে চিনেমাটি বা সেরামিকের জিনিস। ফুলদানি সহ অন্যান্য শৌখিন জিনিস সমগ্র। সবটুকু সজ্জাই বিক্রির জন্য। প্রত্যেকটি সামগ্রী ভীষণ আকর্ষণীয়। দেখে চোখ ফেরানো ভার। আর তার চাইতেও কঠিন কিনতে চাওয়ার ইচ্ছেদের বঞ্চিত করা। এ জিনিস যে কোনো বাড়িতেই দারুণ মানায়। খোলা আকাশের নিচে হোক কিংবা ঘরে বা সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নেওয়া যায় সেরামিকের জিনিস দিয়ে। বাইরেটুকু ময়লা হলে একটু ডিটারজেন্ট দিলেই আবার ফিরে আসে আগের রূপে।
তবে এ জিনিসের সৃষ্টিকর্তাদের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি। সারাদিনে বিক্রি বলতে একটা কি দুটি জিনিস। এ দিয়ে সংসার চালিয়ে যাওয়ার কৌশল জানা দুষ্কর। ১২ ফুটের একটি বাঁশ ৩৫০ টাকা। সেই বাঁশ কেটে তৈরি হয় এদের বাড়ি। আর হাইওয়ের ধারে নয়ানজুলি, সেই হলো ওদের টয়লেট। এর মাঝেই তাদের মেয়েরা মাদুর পেতে বসে পড়াশোনা করে। দারিদ্র যেন এদের অহংকার। এনারা মূলতঃ রাজস্থানের মানুষ। সুদূর হরিপুর থেকে তারা বয়ে আনেন জিনিসগুলো। যে দারিদ্রে তাদের সংসার ভাঙার কথা সেখানে দিনরাত তারা বানিয়ে চলেছে সেরামিকের ভঙ্গুর জিনিস।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – ফাল্গুনী মজুমদার
Discussion about this post