বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যের ইতিহাসে সবরকমভাবে জড়িয়ে আছে দুর্গোৎসব। এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে বাঙালির আবেগ। পুজো ঘিরে রয়েছে নানা স্থানের নানা ইতিহাস। বর্তমানে থিমপুজোর চল বাড়লেও একসময় পুজো বলতে শুধুমাত্র ছিল ষোড়শ শতকে চালু হওয়া বনেদি বাড়ির পুজোগুলি। কলকাতা শহরেও শুরু হয়েছিল দেবী আরাধনা। এখনও কলকাতায় একাধিক বনেদি বাড়িতে বিশেষ নিয়ম মেনে পুজো হয়। তবে, মানুষের স্বভাব অনুযায়ী পুজোর সময় সকলের চোখ থাকে কলকাতার দিকেই। কলকাতার বাইরেও সারা বাংলায় অসংখ্য বনেদি বাড়ির প্রাচীন পুজোগুলিও হয়ে চলেছে। সেখানেও মানুষ মেনে চলেছেন অদ্ভুত সব নিয়ম, বয়ে চলেছে অদ্ভুত সব গল্প।
অনেকে বলেন মালদা ও দিনাজপুরের বনেদি বাড়ির পুজো থেকেই প্রথম বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোর শুরু হয়। সেগুলি মূলত ছিল ধনী বাড়ির পারিবারিক পুজো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমনের পর থেকেই এই পারিবারিক পুজো সামাজিক আকার নিতে শুরু করেছিল। এই পুরনো বনেদি বাড়িগুলিতে সেই নির্দিষ্ট পরিবারের আলাদা নিয়ম, বিশ্বাস অনুযায়ী পুজোর নিয়মও বদলে বদলে যেত। তেমনই অদ্ভুত এক নিয়ম এখনও চলছে নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের মাটিয়ারি গ্রামের বনেদি বাড়ির পুজোয়।
প্রায় ২৭৫ বছরের প্রাচীন এই পুজো। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো পরিচিত রামসীতা বাড়ির দুর্গাপুজো বললে। কারণ, এই বাড়ির সামনে রামসীতার প্রাচীন বিগ্রহ রয়েছে। এখানে সন্ধিপুজো শুরু হয় সাবেকি বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে। সপ্তমীতে সাতরকম ভাজা, অষ্টমীতে আটরকম ভাজা, নবমীতে নয়রকম ভাজা নিবেদন করা হয় দেবীকে। তবে এসমস্ত ছাপিয়ে গিয়েছে প্রতিমা বিসর্জনে টিকটিকির অবশ্যম্ভাবী আগমন। টিকটিকি না এলে নাকি বিসর্জনই হয়না প্রতিমা।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া আর নদিয়ার বল্লভপাড়া ঘাটের মাঝে ভাগীরথী নদীতে বিসর্জন হয় এই বনেদি বাড়ির প্রতিমার। বিসর্জন ঘাটে প্রতিমা নামাতেই নাকি প্রতি বছরই দুই থেকে তিনটি টিকিটিকি আসে। কালচে রঙের সাধারণ টিক্টিকিওর বদলে তাদের রং হয় নাকি দুধে আলতা। প্রতিমা বিসর্জনের শেষে পাঞ্জাবির পকেটে সেই টিকটিকি পুরে বাড়ি ফেরেন হর্তাকর্তারা। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বাড়ির দুর্গা দালানে। বাড়ির মানুষ বিশ্বাস করেন এই টিকটিকি দেবীরই প্রেরিত। গোটা পরিবারকে সুখ শান্তিতে ভরিয়ে তুলতেই তার আগমন।
Discussion about this post