হাতে বরণডালা। লালপেড়ে সাদা শাড়ী পরে রমণী। আর সিঁদুরে রাঙা দুই গাল। এসবই তো আমাদের পরিচিত ছবি। কিন্তু এই পরিচিতের মাঝেই, কোথাও কোথাও ঘটে চলে কিছু ব্যতিক্রমী দৃশ্য। তেমনই এক বৈপরীত্যে ভরা পুজো ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজো। দূর্গা, কালীর পর বাংলায় আসন নেন দেবী জগদ্ধাত্রী। এই পুজোয় চন্দননগর ও কৃষ্ণনগর বিশেষ জনপ্রিয় চিরকাল। তবে ২২৮ বছরের তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজো, তার বিশেষত্বে আজও অনন্য।
দেবী এখানে প্রায় ২৭৭ বছরের অধিষ্ঠাত্রী। ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে বহু তথ্য। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার রাজকর্মচারীদের অনুদান দেন। আদেশ দেন নিজ এলাকায় পুজোর আয়োজন করার। তাঁর বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন দাতারাম সুর। আনুমানিক ১৭৬৩ সালে চন্দননগর সংলগ্ন গৌরহাটিতে আসেন তিনি, সঙ্গে দুই বিধবা কন্যা। এখানেই শুরু করেন পুজো। এটিকেই চন্দননগরের আদি পুজো মনে করা হয়। ৩০ বছর পর এটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। শ্রীরামপুরের জমিদার গোস্বামীরা পুজো গৌরহাটি থেকে তেঁতুলতলায় স্থানান্তরিত করেন। এখনো সেখানেই হয় পুজো।
১০০টি বেনারসি শাড়ি দেবীকে দেওয়া হয়, গৌরবর্ণ প্রতিমা। দশমীতে দেবীকে বরণ ও সিঁদুরখেলা দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন। কিন্তু এই বিশেষ রীতিতে মহিলাদের জায়গায় অংশ নেন পুরুষরা। মহিলাদের মতো শাড়ি-সিঁদুরও পরেন তাঁরা দশমীতে। এই পুজোর যাবতীয় কাজে পুরুষরাই প্রাধান্য পায়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলেন, তৎকালীন ইংরেজ ও ফরাসীরা এই পুজোয় ঈহাজির হতেন। তাই অন্দরের মহিলারা স্বভাবতই এসব রীতিতে আগ্রহ দেখাতেন না। তাছাড়া এতই উঁচু প্রতিমা যে মহিলাদের অসুবিধা হত বরণে। তাই বরণের দায়ভার পুরুষদের কাঁধেই যায়। এমনকি বরণের সময় তাঁরা শঙ্খ বাজান, উলুধ্বনিও দেন। আবার অনেকের মতে ছেলেদের বরণের পিছনে বড় কারণ হল প্রতিমার উচ্চতা। যেহেতু প্রতিমার উচ্চতা অনেকটাই বেশি, তাই টুলে চেপে মা-কে বরণ করার গুরুদায়িত্ব যুগের পর যুগ ধরে পাড়ার ছেলেরাই পালন করে চলেছেন।
Discussion about this post