প্রতীকী ছবি
দুর্গা মন্দিরের সামনে রাত্রিবেলা কেউ ঘুমিয়ে পড়লেই, তিনি সকালে উঠে দেখেন তিনি যেখানে শুয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি অনেক দূরে শুয়ে আছেন। একজন নয়, অনেকজনের নাকি এই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। হরিপাল ব্লকের বন্দিপুর গ্রামের ঘোষ বাড়িতে এই ঘটনাই ঘটে চলেছে বহুবছর ধরে। তাই বাড়ির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, যে দুর্গা মন্দিরের দেবী আক্ষরিক অর্থেই জাগ্রত। তিনিই রাত্রিবেলা মন্দিরের সামনে চলাফেরা করেন। তিনিই অনুপ্রবেশকারীকে নিজের চলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেন যত্নের সঙ্গে।
ঘোষ বাড়ির এই পুজো ৩৫০ বছরের পুরনো পুজো। এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা হলেন ভীমচন্দ্র ঘোষ। বন্দিপুরের রায় পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়েছিল। তারপর রায় পরিবারকে অনুসরণ করে ভীমচন্দ্র ঘোষ ঘোষ পরিবারেও করেছিলেন দুর্গা পুজোর প্রচলন। পরিবারের কুলদেবতা কালাচাঁদ জিউ। যদিও, ষাট বছর আগে কালাচাঁদের অষ্টধাতুর প্রাচীন মূর্তিটি চুরি হয়ে গিয়েছে। ঘোষ পরিবারে পুজোর প্রসাদ পরিবারের সদস্যরা কেউ খান না। তা দিয়ে দেওয়া হয় পুরোহিত, নাপিত, ঢাকিদের। শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ডালাটি রাখা হয় বাড়িতে। বলির আওয়াজে কুলদেবতা যেন রুষ্ট না হন, সেইকথা মনে রেখে বলির সময় কালাচাঁদ জিউর মন্দিরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখা হয়। দেবী প্রতিমা হয় উগ্ররূপী এবং একচালা।
হরিপালের বন্দিপুরের বহু মানুষের বিশ্বাস, ঘোষ বাড়ির দেবী রাত্রিবেলা মন্দিরের সামনে হাঁটেন। কোন এক সময় মূর্তি তৈরি করতে করতে মৃৎশিল্পীরা মন্দিরের সামনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা ঘুম থেকে উঠে টের পান তাঁদের কেউ যেন সরিয়ে দিয়েছে মন্দিরের এক কোণে। আরও একবার নারকেল গাছ কাটতে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরাও মন্দিরে শুয়েছিলেন। রাত্রিবেলা মন্দির থেকে নেমে এসে নাকি দেবী তাঁদেরকেও সরিয়ে দিয়েছিলেন। শ্রমিকরা ভোরবেলা মাঠের মধ্যে ঘুম ভেঙে উঠে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই দেবীকে ঘিরে এমন অনেক ঘটনাই বন্দিপুরে লোকমুখে শোনা যায়। এই মূর্তি দেখতেও প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন।
Discussion about this post