সোনামুখী, বাঁকুড়া জেলার সাজানো গোছানো ছোট্ট একটি জনপদ। কথিত আছে দেবী স্বর্ণময়ীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে সোনামুখী। সোনামুখী ছিল তাঁতিদের গ্রাম। ব্রিটিশ যুগে সুতি বস্ত্র, নীল ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত ছিল। এখনও সিল্ক শাড়ির জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় এই জনপদটি। পূর্বে সুবর্ণ বণিক ও তাঁতিদের রমরমা ছিল এই গ্রামে। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্দির বানিয়েছেন। সেই মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় মন্দির হল পঁচিশটি চূড়া সহ এবং আগাগোড়া টেরাকোটায় মোড়া শ্রীধর মন্দির।
পশ্চিমঙ্গের পাঁচটি জায়গায় আছে এরকম পঁচিশ চূড়ার মন্দির। প্রতি মন্দিরেই রয়েছে তিনটি করে তলা কিন্তু সোনামুখীর শ্রীধর মন্দির মাত্র দুটি তলা বিশিষ্ট। বর্তমানে এই মন্দিরের বয়স ১৭৫ বছর এর ওপর। মন্দিরের পেছনের দিকে রয়েছে একটি শ্লেট পাথরের লিপি যার থেকে আমরা জানতে পারি মন্দিরটি ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে এক তাঁতি এই মন্দির নির্মাণ করেছেন এবং স্থপতি ও শিল্পী হলেন হরি সূত্রধর।
মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ। পুরো মন্দিরটি অসাধারণ টেরাকোটার কাজে ভরে আছে যা মানুষের মনকে বিস্ময়ে ভরিয়ে তোলে। এটির ভেতরের দেওয়ালেও রয়েছে মন ভালো করে দেওয়ার মত অসাধারন সুন্দর টেরাকোটার কাজ। মন্দিরের স্তম্ভগুলিতেও দেখা যায় অন্যন্য সুন্দর শিল্পকলার নিদর্শন যা অন্যান্য মন্দিরে খুব কমই দেখা যায়। তবে বর্তমানে এই মন্দির জীর্ণ হয়ে পড়েছে। যথাযোগ্য যত্নের অভাবে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে এই মন্দির। টেরাকোটাও নষ্ট হয়েছে কিছু জায়গায়। মন্দিরের দেওয়ালে জন্মাতে শুরু করেছে আগাছা। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে এই আগাছা পরিষ্কার করানো হয়েছিল। যদিও আবার আগাছা জন্মাতে শুরু হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতি বছর দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক আসেন এই মন্দির দেখতে। ভেঙে পড়লেও এই মন্দিরের আকর্ষণ এখনও কমেনি।
কলকাতার ধর্মতলা থেকে সোনামুখী পর্যন্ত আছে সরাসরি বাস। এছাড়াও বর্ধমানের আলিশা থেকে পাবেন সোনামুখীর বাস। বছরের যে কোনো সময় যেতে পারেন। কিন্তু কালী – কার্তিক পুজোর সময় গেলে হয়তো পশ্চিমবঙ্গের সেরা কালী-কার্তিক পুজো দেখতে পারবেন। প্রত্যেকটি মূর্তি আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। এত রকমের বাজনা, মেলা, প্যান্ডেল হয়ত যথেষ্টই ব্যতিক্রমী। সোনামুখী গেলে ওখানকার অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান না দেখলে জানতেই পারবেন না সোনামুখীতে শ্রীধর মন্দির ছাড়াও রয়েছে ঠাকুর হরনাথের জন্মস্থান সোনামুখী। হরনাথ-কুসুমকুমারী মন্দির, মনোহর দাস ঠাকুরের মন্দির সহ আরও অনেক মন্দির।
Discussion about this post