‘চশমা’! সেই যে দিদা-ঠাকুমার চোখে পুরু কাঁচের চশমা। যার ফাঁক দিয়ে জরিপ করতেন ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান! কিংবা হাল আমলের এভিয়েটর ফ্রেমে কোনো এক কেতাদুরস্ত নাগরিক। চশমার একাল আর সেকালের মাঝে ধ্রুবক শুধু একটিই ; ‘মুন্সিরহাট’।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাট। তার জগৎ জোড়া খ্যাতি এই চশমার দৌলতেই। দিদা-ঠাকুমার ভূত-ভবিষ্যৎ জরিপ করার অস্ত্র বেশিরভাগই তৈরী হয় এখানে। আই গ্লাস থেকে সান গ্লাস, একটা সময় চশমার বাজারে আধিপত্য ছিল এই মুন্সিরহাটের। এলাকায় ঢুকলেই সকাল থেকে মেশিনের ঘ্যাস ঘ্যাস আওয়াজ। মুন্সিরহাটের প্রাণ তো ওই মেশিনে। কাঁচের উপর পারদ প্রলেপ দিয়ে, তারপর তা ঘষে ঘষে তৈরী হতে থাকে বিভিন্ন পাওয়ারের চশমা।যার যেমন চাহিদা। কেউ বা উত্তল, কারো প্রয়োজন অবতল, সেই দ্বাদশ শ্রেণীর পদার্থবিদ্যার প্র্যাক্টিকাল ক্লাস যেন। কারিগররাও ছুটে চলেছে মেশিনের মতোই।
তবে সময়ও বদলেছে। সঙ্গে মানুষের চাহিদাও। কাঁচের পরিবর্তে মানুষের ঝোঁক এখন ফাইবারের গ্লাসেই বেশি। দামেও তুলনামূলক কম। সুতরাং চশমার বাজারেও বদল ঘটছে ধীরে ধীরে। যে মুন্সিরহাট একসময় চশমা সাম্রাজ্যে একচেটিয়া রাজত্ব করেছে , তার এখন অনেক কারখানাই বন্ধ। কারিগররা পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া আর উপায় কি! সরকারের কাছে আবেদন-অনুরোধ করা হচ্ছে সবই। এখন আপাতত সবাই সেই দিকেই মুখ ফিরিয়ে বসে। দেখা যাক, এই চশমার জগতের ভোল বদল হয় কি না!
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – মনোজ চক্রবর্তী এবং আনফোল্ড বাংলা
Discussion about this post