কলেজ স্ট্রিটকে পিছনে রেখে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে কলাকার স্ট্রিটের ঠিক মুখেই খান কয়েক দোকান। দোকানের বাইরেটা কার্যতই যেন মুখ ঢেকেছে লাল, সবুজ, গেরুয়া পতাকাদের ভিড়ে। গোটা রাজ্যে রাজনৈতিক ধর্মীয় এবং জাতীয় পতাকার পাইকারি সরবরাহকারী এঁরাই। ভোটের ঠিক মুখে কেমন পরিস্থিতি এই বাজারের? সেই অন্দরেই উঁকি দিয়েছিল ডেইলি নিউজ রিল।
হালে ভোট বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে রাজনীতি বলতে কিন্তু প্রথমেই মাথায় আসে বিভেদ, রাজনৈতিক মতানৈক্য মায় হানাহানি, হিংসার ছবিই। সেখানে বড়ই করুণ হয়ে যেন ধরা দেয় আম আদমির হাল-হকিকৎ। কিন্তু রাজনৈতিক এই পতাকা ব্যবসা কার্যতই ভাত জোগাচ্ছে হাজার খানেক মানুষের পেটে। একই সঙ্গে অদ্ভুত এক বিভেদের মাঝে ঐক্যের সুরে বেঁধেও রেখেছি তথাকথিত অহি-নকুল দলগুলিকে। একই দোকানে থরে থরে সাজানো বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলের দলীয় পতাকা। লোকসভা ভোটের দামামা বেজে উঠেছে দেশ জুড়েই। তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপান উতর। এহেন অবস্থায় পতাকা বাণিজ্যে কতখানি বসলেন লক্ষ্মী?
গুপ্তা ট্রেডার্সের কর্ণধার রোহিত গুপ্তা জানান, তাঁদের দোকানেই সবমিলিয়ে কর্মী সংখ্যা ২০। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা অবধি বেতন পান এই কর্মীরা। অন্যদিকে পাশেই শিভা টেক্সটাইলের কর্মচারী সংখ্যা আবার ৩৫ এর কাছাকাছি। তাঁদের বেতনও ঘোরাফেরা করে সর্বোচ্চ ১৩-১৪ হাজারের মধ্যে। ভোটের বাজারে কেমন চলছে ব্যবসা? এই প্রশ্নের উত্তরে রোহিতবাবুর সাফ উত্তর, “বিধানসভা ভোটের সময় শুধু আমরাই প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার রাজনৈতিক পতাকা বিক্রি করেছি। চলতি লোকসভা ভোটের যা হিসেব তবে বিক্রিবাটার অঙ্কটা এবার গিয়ে প্রায় ৪০ লাখ ছোঁবে বলেই মনে হয়।” একই সুর তারামা এন্টারপ্রাইসের প্রতীকবাবুর গলাতেও। তিনি জানান, “আমাদের দোকানে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৭০ টাকা অবধি বিভিন্ন দামের পতাকা পাওয়া যায়। শুধু পতাকাই নয় মেলে উত্তরীয়, খদা এসবও। ভোট আসা মানে আমাদের রীতিমতো নাওয়া খাওয়া ভুলে কাজে লেগে থাকতে হয়। এবারও ভালোরকম ব্যবসা হবে বলেই মনে করছি।” কিন্তু ভোটের সময় ছাড়া বাকি সময় কেমন করে চলে ব্যবসা? নোভেলটি স্টোরের কর্ণধার মেহতাব আলির কথায়, “সারা বছর মিটিং মিছিল লেগেই থাকে রাজ্যে। তাছাড়া ১৫ আগষ্ট ২৬ জানুয়ারি তো আছেই। জাতীয় পতাকা কেনার হিড়িক লেগে যায় তখন স্বভাবতই।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রামমন্দির উদ্বোধনের সময় সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ধর্মীয় পতাকা এবং উত্তরীয়র ব্যবসা হয়েছে বলেই দাবি দোকান মালিকদের।
এবার আসুন সহজ কিছু হিসেব করা যাক। শুধুমাত্র পতাকার দোকানগুলিতে গড়ে ২০ জন করে ধরলেও কর্মরত প্রায় ২০০ জন মানুষ। তাঁদের পরিবারে ৫ জন সদস্য ধরে নিলে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ১০০০ জনে। চাকরির জন্য হাহাকার রাজ্যজুড়ে। হবু শিক্ষকদের স্থান হয়েছে রাস্তায়, কোথাও আবার দলীয় কোন্দলে কাজ হারিয়েছেন মানুষ। সেই রাজ্যে দাঁড়িয়েই প্রায় হাজার জনের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে সেই রাজনীতিই। নিতান্তই সৎ পথে। “নীল-সাদা এই ফুটপাতে ভরা মিথ্যে কথার শহরে” এও এক গল্প, এও এক ছবি; মুদ্রার উলটো পিঠের আশার আলোর ছবি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার – প্রলয় হাজরা
Discussion about this post