দীপাবলিতে শ্যামার আরাধনায় আলোয় নতুন করে সেজে উঠবে বাঙালির গৃহকোণ। এককালে শ্মশানে,নির্জন স্থানে আরাধ্যা কালী আজ গৃহস্থের ঘর থেকে পাড়ার ক্লাবে সর্বত্র পূজিতা। কোনো কোনো জায়গায় অলৌকিকতা এবং রহস্যে মোড়ানো সেইসব পুজোর ইতিহাস। কোথাও ইতিহাসের পাশাপাশি বর্তমানও মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করতে বাধ্য। এই যেমন মালদহের শোভানগরের উল্কা ক্লাবের কালী পুজো। সেখানকার ৫১ ফুট উঁচু কালী প্রতিমা তাক লাগিয়ে দেয় মালদহবাসীদের চোখে। সেখানকার শুধু প্রতিমা নয় মন্ডপ সজ্জা সেও এক দেখার বিষয়।
স্থানীয় নাট্যকর্মী শশাঙ্ক ঝা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৭৯ সালে শুরু করেন এই পুজো। পরবর্তীতে তিনি খানিক আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হন। কিন্তু মায়ের পুজো তো বন্ধ হয়ে দেওয়া যায় না। পুজোর সমস্ত খরচের ভার বহন করতে এগিয়ে এল শোভানগরের উল্কা ক্লাব। তারপর থেকে তারাই পুজোর সমস্ত দায়িত্ব সামলে আসছে। ৩৫ কেজি সুতলি, এক ট্রাক পাট কাঠি, ৩০ পণ খড়, ৮০ টি বাঁশ সব মিলিয়ে দেবীর প্রতিমা নির্মাণে বিপুল সরঞ্জামের আয়োজন করা হয়।
তবে এখানে শুধু অমাবস্যাতেই পুজো হয় না। পরবর্তী সাতদিন ধরে চলে দেবীর আরাধনা। সঙ্গে পুজো প্রাঙ্গনে রীতিমতো ছোটোখাটো মেলা বসে যায়। পুজোয় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই উপস্থিত থাকে। সম্প্রীতির মেলবন্ধনের এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতি বছরই কালী পুজোয় মালদহের অন্যতম আকর্ষণ হল শোভানগর উল্কা ক্লাবের পুজো। লোকের বিশ্বাস দেবী এখানে ভীষণ জাগ্রত। তাই এই পুজোয় দর্শনার্থীর আগমন শুধুমাত্র জেলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিবেশী জেলা ও রাজ্য থেকেও আসতে থাকে দর্শনার্থীর দল। সাতদিন ব্যাপী পুজোর শেষে কালিন্দী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় মঙ্গল ঘটের। পরের দিন এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়। সেই শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানও দেখার মতো এক জিনিস!
আরও পড়ুন বিপ্লবীদের হাত ধরেই শুরু মালদার দশ মাথা কালীর পুজো!
এইভাবেই মানুষের বিশ্বাস, আনন্দ, উদ্দীপনা নিয়ে অলৌকিকতার সঙ্গে মিলেমিশে বেঁচে আছে এই সমস্ত পুজো। দেবী ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে যেন সকলের আপন মা। কারণ শাক্তমতে তিনিই যে আদ্যাশক্তি, স্বয়ং জগজ্জননী!
Discussion about this post