কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যে পরিপূর্ণ আমাদের বাংলা। বাংলার প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন বাংলার গৌরবময় ইতিহাসের বহু নিদর্শন। বাংলার প্রাচীন স্থাপত্যকলাগুলির গুরুত্বপূর্ণ একটি হল পঁচিশ চূড়ার মন্দির। বাংলায় মোট পাঁচটি পঁচিশ চূড়ার মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হুগলীর সোমড়াবাজারের সুখারিয়া গ্রামের প্রাচীন ‘আনন্দময়ী কালি মন্দির’। পঁচিশ চূড়া যুক্ত এই মন্দিরটি শাক্ত মন্দির। এই মন্দিরটি বাদে বাকি চারটি মন্দির বৈষ্ণব মন্দির যেখানে পূজিত হন রাধাকৃষ্ণ।
ব্যান্ডেল হয়ে কাটোয়া রেলপথের সোমড়াবাজার রেলস্টেশন থেকে ভ্যান বা টোটোতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সুখড়িয়া গ্রাম। এখানেই কালীমন্দিরে বিরাজ করছেন মা আনন্দময়ী। মায়ের মন্দিরে পৌঁছতে গেলে ডান হাতে পড়বে একটি বিশাল পুকুর। মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি উঠোন। উঠোনের চারিদিকে শিব মন্দির। মায়ের মন্দিরের ডানদিকে ৬ টি শিব মন্দির ও বাম দিকে ৬ টি শিব মন্দির।
কথিত আছে, ১৮১৩ সালে সোমড়াবাজারের এই বিখ্যাত আনন্দময়ী মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন সুখড়িয়া গ্রামের জমিদার বীরেশ্বর মিত্র মুস্তৌফি। জানা যায়, মিত্র বংশের রামেশ্বর মিত্রকে ‘মুস্তৌফি’ উপাধি দিয়েছিলেন তৎকালীন সম্রাট ঔরঙ্গজেব স্বয়ং। মায়ের মন্দিরটি প্রাঙ্গনটি শুরু হয়েছে জমিদার বাড়ি ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে। মা আনন্দময়ীর মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে ইটের তৈরী। দক্ষিণমুখী এই মন্দিরের ওপরে তিনটে তল রয়েছে। প্রথম তলে চার কোণায় তিনটি করে মোট বারোটি চূড়া। দ্বিতীয় তলে চার কোণায় দুটি করে মোট আটটি চূড়া। তৃতীয় তলে চার কোণায় একটি করে মোট চারটি, মাঝখানে আরও একটি চূড়া। এটি অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু।
মন্দিরের স্তম্ব, খিলান, শীর্ষ ও বহির্ভাগ টেরাকোটার দারুন সুন্দর অলংকরণে সাজানো। মন্দিরের গর্ভগৃহে সিমেন্টের বেদিতে কাঠের সিংহাসনে শায়িত শিব। শিবের হাত দুটি মাথার দিকে। মা আনন্দময়ী বাবু হয়ে বসে আছেন শিবের মুখের দিকে মুখ করে। কষ্টিপাথরে নির্মিত বিগ্রহ উচ্চতায় প্রায় তিন ফুট। ফালা ফালা চোখ দুটো যেন একটা পটলের দুটো ফালি। জনশ্রুতি আছে, অনন্তরাম স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই কষ্টিপাথরের এই মূর্তি উদ্ধার করে মন্দিরে স্থাপনা করেন। এখানে নিত্য পুজো ছাড়াও দীপান্বিতা অমাবস্যায় বড় করে পুজো হয়। এছাড়াও মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন ও মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতেও মহাধূমধামে মায়ের পুজো হয় এখানে। এই পুজো দেখতে ভিড় জমান আশেপাশের অঞ্চলের বহু মানুষ। সোমড়াবাজার বা তার আশেপাশের কোথাও এলে অল্প সময়েই ঘুরে আসা সম্ভব মা আনন্দময়ী মন্দির। মায়ের অপরূপ মূর্তি ও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মন কাড়বেই।
তথ্য ঋণ – দ্য বং মিরর
Discussion about this post