সূর্যগ্রহণ নিয়ে চমৎকার কিছু কুসংস্কার রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই। প্রাকৃতিক থেকে মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনাকে অন্ধবিশ্বাস হিসেবেই লালন করে এসেছেন অনেকেই। প্রাচীনকালে চৈনিকদের ধারণা ছিল, মাঝেমধ্যেই মহাকাশ থেকে একটি ড্রাগন এসে সূর্যকে গিলে খায়। ঠিক সেই কারণেই হয় সূর্যগ্রহণ। আবার নর্ডিক পুরাণ অনুযায়ী একটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে সূর্যকে খেয়ে ফেলে। প্রাচীন ভিয়েতনামীদের বিশ্বাস ছিলো দৈত্যাকার ব্যাঙ সূর্যকে গিলে ফেলে। অন্যদিকে প্রাচীন কোরিয়ানরা বিশ্বাস করতেন একটি দুষ্টু কুকুর এসে আকাশ থেকে আস্ত সূর্যটাকে চুরি করে নিয়ে যায়।
অন্ধবিশ্বাসের আঙিনায় এশিয়া মহাদেশের মতোই পিছিয়ে ছিল না নেটিভ আমেরিকানরাও। তাঁদের ধারণা প্রকান্ড ভাল্লুক এসে সূর্যের গায়ে কামড় বসানোর চেষ্টা করে। যদিও সূর্য তার খিদে মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় কিছুদিন পর রাতের বেলা চুপিচুপি এসে চাঁদটাকে খেয়ে যায়। তাই আকাশে গ্রহণ লাগলেই আকাশের দিকে ঘটিবাটি নেড়ে তুমুল শব্দের সৃষ্টি করার চল ছিল, যাতে শব্দের কম্পনে কাল্পনিক প্রাণীগুলো সূর্য ও চন্দ্র গ্রাস না করে। গ্রীকদের ধারণা ছিল পৃথিবীতে যখন পাপ ও অনাচার বেড়ে যায় তখন সূর্যদেব রুষ্ট হয়ে কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে পাতালে চলে যান। ওদিকে এস্কিমোদের বিশ্বাস সূর্যদেবী মালিনা তার বোন চন্দ্রদেবী অ্যানিংগানের উপর রাগ করে পালিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়ার পর আনন্দিত হয়ে দু’বোন যখন আলিঙ্গন করতো তখন সূর্য গ্রহণ হতো। আফ্রিকার দেশ বেনিন কিংবা টোগোর অধিবাসীদের ধারণা চন্দ্র, সূর্য প্রায়শই যুদ্ধে লিপ্ত হতো। যার পরিণতি সূর্যগ্রহণ হয়।
কিন্তু সত্যিটা কী? জ্যোর্তিবিজ্ঞানের ভাষায়, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুঘোরে আর চাঁদ ঘোরে পৃথিবীর চারদিকে। ঘুরতে ঘুরতে মাঝেমধ্যেই পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ একই সরলরেখায় এসে পড়ে। সূর্যের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায়, সূর্য সর্বদাই এই সরলরেখার একপ্রান্তে পড়ে থাকে। সেটার উপরেই নির্ভর করছে সূর্য গ্রহণ হবে, নাকি চন্দ্র গ্রহণ হবে! যদি সরলরেখার অন্য প্রান্তে পৃথিবী থাকে, তাহলে চাঁদ মামা এসে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চাঁদের যে পিঠটা সূর্যের দিকে থাকে,সে পিঠে সূর্যের আলো পড়ে। আমরা জানি কোনও বস্তুর ওপরে এক পাশ থেকে আলো ফেললে বিপরীত পাশে ওই বস্তুর ছায়া পড়ে। কাজেই চাঁদের যে পিঠটা পৃথিবীর দিকে থাকে, সে পিঠের ছায়া পৃথিবীর উপরে পড়ে। ফলে চাঁদের ছায়া পৃথিবীর যে স্থানে পড়ে সেই স্থান থেকে সূর্যকে দেখা যায় না।অর্থাৎ দিনের বেলা কিছু সময়ের জন্য চাঁদ এসে সূর্যকে ঢেকে ফেলে। এটাই হলো সূর্য গ্রহণ। বিজ্ঞান এই মুহূর্তে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করায় অনেকাংশে এই কুসংস্কার দূর হয়েছে। কিন্তু সূর্যগ্রহণ চলাকালীন রান্না না করা কিংবা রাস্তায় না বেরনোর মতো অন্ধ বিশ্বাস আজও গেঁথে রয়েছে সমাজের শিকড়ে।
Discussion about this post