আমরা সাধারণত বিবাহবার্ষিকী পালন করতে দেখি ধুমধাম অনুষ্ঠান ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে। কিন্তু নবদ্বীপের নাস্তিক ভিলা’র দম্পতি তাঁদের বিবাহবার্ষিকী পালন করলেন নবদ্বীপবাসীকে সাপ সম্পর্কে সচেতন করার মধ্য দিয়ে। গত ৭ জুলাই নবদ্বীপের অতি পরিচিত মুখ এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের কর্মী মৌসুমী ও প্রতাপের ছিলো চতুর্থ যৌথজীবন বার্ষিকী। তাঁরা অবশ্য বিবাহবার্ষিকী বলতে চান না, পরিবর্তে তাঁরা যৌথজীবন বার্ষিকী বলতেই পছন্দ করেন। প্রতিবছরই তাঁরা মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিতে কোনো না কোনো বিজ্ঞান সচেতনমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না।
এখন বর্ষাকাল। এই সময়ে সাপের উপদ্রব বাড়ে এবং সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুও এই সময়ে বেশি হয়। শুধুমাত্র ভারতে প্রতিবছর সরকারি হিসাবে সাপের কামড়ে প্রায় ৬৪০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, বেসরকারি হিসাবে সেই সংখ্যা প্রায় ১ লাখেরও বেশি। তাই সকলকে সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে এই সচেতনমূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন এই বিজ্ঞানমনস্ক দম্পতি। সাপের পোষ্টার প্রদর্শনী, সাপ ও কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়েও আলোচনা করা হয়। সাপ সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেটও বিলি করা হয়। এখানেই শেষ নয়, অসংখ্য মানুষ যাতে সচেতন হয় তার জন্য টোটো রিক্সার পিছনে “‘সাপের কামড়ে আর নয় মৃত্যু” শিরোনামে ব্যানার করে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী সকলেই এই অভিনব অনুষ্ঠান দেখে খুব খুশি।
নবদ্বীপের এই বিজ্ঞানমনস্ক দম্পতি মৌসুমী ও প্রতাপ বলেন, “আমাদের সমাজ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস যে কোনো জাতি তথা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমাদের যৌথজীবন বার্ষিকীতে বিজ্ঞান সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাড়া প্রতিবেশীকে সচেতন করার চেষ্টা করবো যাতে তাঁরা কুসংস্কারময় অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তির পথে, আলোর জগতে প্রবেশ করতে পারে। অসচেতন মানুষ দিয়ে সুস্থ সবল সমাজ বা দেশ গড়া যায় না। তাই মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক এবং জিজ্ঞাসু মন তৈরী করাই আমাদের এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। আমাদের যৌথজীবন বার্ষিকীতে প্রতিবছরের মতো এবছরও আমরা সাপ নিয়ে সচেতনমূলক অনুষ্ঠান করলাম।” এই বিজ্ঞানমনস্ক দম্পতি তাঁদের যৌথজীবন বার্ষিকীতে দাবি তোলেন, “প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এভিএস রাখতে হবে। রোগীকে আগে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে, পরে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। বিনামূল্যে বিজ্ঞানম্মত চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হবে। স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে।”
Discussion about this post