কয়েকদিনের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য উত্তরবঙ্গ বা আশেপাশের রাজ্যের পাহাড়গুলি আজ ভীষণ সহজলভ্য স্থান হয়ে উঠেছে। ওই যে কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। ফলে, ইচ্ছেটুকু হলেই মানুষ ঘুরে আসতে পারেন সেই অতি দুর্গম পাহাড়ের বাঁকগুলি, উপভোগ করতে পারেন নির্জন প্রকৃতিকে, ভীষণ ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আগুনের ধারে বসে গল্প করতে পারেন কোনো এক পাহাড়ী মানুষের সঙ্গে। দুদ্দাড় করে এগিয়ে চলা আধুনিক এয়ারবিএনবি’র জমানায় যেখানে মানুষ বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন, সেখানে পাহাড় তো কোন ছার!
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমও বেশ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সঙ্গেই বেড়ে উঠেছে ব্যবসা, লাভ, লোকসানের গল্প। তৈরি হচ্ছে হোমস্টে। আগে পাহাড়ের মানুষেরাই নিজের বাড়িতে হোমস্টের ব্যবস্থা করতেন। এখন হোমস্টেগুলি হয়ে উঠেছে প্রায় লো-বাজেট হোটেল। কলকাতা বা অন্যান্য শহরে বসে ব্যবসায়ীরা লিজ নিচ্ছেন হোমস্টে। অসংখ্য বাঙালি বা অন্য রাজ্যের মানুষ নিযুক্ত হচ্ছেন হোমস্টের কাজে। শহরে বসে ব্যবসায়ী লাভ করছেন প্রভূত পরিমাণে। পর্যটনপ্রেমী দেবিকা বলছেন, “বাঙালির লিজ নেওয়া হোমস্টেতে খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এরা পরিবেশের নির্জনতাও বজায় রাখে না এবং ব্যবহারে সেই আন্তরিকতাও নেই। মালিকপক্ষ স্থানীয়দের ওপর যেন ক্ষমতা প্রদর্শন করে। স্থানীয় মানুষরা যেন নিজের জায়গায় নিজেরাই অবহেলিত।’’
সিকিমে ২০১৩ সালের হোমস্টে রেজিস্ট্রেশনের নিয়মের ৩ নম্বর ধারার ৬ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, হোমস্টের মালিক তাঁর হোমস্টে কাউকে লিজে বা ভাড়ায় দিতে পারবেন না। যিনি হোমস্টে করবেন তাঁকেই সেটি চালাতে হবে। কিন্তু অনেকেই সেই নিয়ম মানছেন না। সম্প্রতি সিকিম সরকারের তরফে পর্যটন দপ্তর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যে এই নিয়ম মানতেই হবে এবং যাঁরা মানবেন না তাঁদের শাস্তি পেতে হবে। পর্যটন দফতরের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন সিকিমের অধিকাংশ হোমস্টে মালিক। সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের হোমস্টে ব্যবস্থা চালু করতে বিশেষ ঋণদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিকিম সরকারের এই পদক্ষেপে খুশি ঋতুপর্ণার মত প্রকৃতিপ্রেমীরাও। ঋতুপর্ণা বলছেন, কলকাতায় বসে যিনি হোমস্টের বুকিং নেন, তাঁর সেই জায়গা নিয়ে প্রায় কিছুই জানা থাকে না। পর্যটককেই মুশকিলে পড়তে হয়। এছাড়া, লিজের হোমস্টেতে খরচও অনেক বেশি। তিনি বলছেন, “লিজে নেওয়া হোমস্টে মানেই টাইমে খাও- চেক ইন করো- ঘর ছাড়ো। বাকি কিছুই নেই! হোমস্টে মানে তো শুধু লাঞ্চ, সন্ধ্যার স্ন্যাক্স, ডিনার আর পরদিনের ব্রেকফাস্ট নয়। হোমস্টে মানে তারও বেশি কিছু। বিশেষ করে আমাদের কাছে, যারা বছরে সাত-আট মাসই পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরি।’’
Discussion about this post