কালী পুজো আসতেই বাঙালি জীবনে ভূতের গল্পের কদর যেন এক ধাক্কায় বেড়ে যায় অনেকখানি। তবে শুধুই কি ভূত-প্রেত?সাধারণের আবার তুমুল আকর্ষণ তন্ত্র-মন্ত্রকে ঘিরে। সেখানে তো যক্ষ-যক্ষিণী-যোগিনী এঁদের নিত্য যাতায়াত। কালী পুজোয় মায়ের প্রতিমার পাশেই দেখা যায় তাঁর দুই সহচরিণীকে; ডাকিনী ও যোগিনী। পুরাণের তথ্য অনুযায়ী অসুরদের সঙ্গে দেবী দুর্গার যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর দেহ থেকে জন্ম নেন আটজন যোগিনী। প্রতিজন থেকে আরো আটজন মিলিয়ে মোট চৌষট্টি জন যোগিনীর জন্ম হয়। চৌষট্টি যোগিনীর মধ্যে ভারতবর্ষে মোট চারটি যোগিনী মন্দির পাওয়া গিয়েছে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে ডাকিনীর তেমন উল্লেখ না থাকলেও তাঁর অস্তিত্ব বৌদ্ধ ধর্মে যথেষ্ট প্রভাবশালী। তবে এককালে কামাখ্যা ছিল ডাকিনী বিদ্যার পীঠস্থান। কালীপুজোর সময় দেবীর পাশাপাশি পুজো করা হয় তাঁর এই দুই সহচরীকেও। তাঁদের রয়েছে বিশেষ ধ্যান,মন্ত্র থেকে পুজো পদ্ধতি। তবে সে সবই সাধক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে!
তবে এঁরা বাদেও তন্ত্র সাধনায় উল্লেখ মেলে যক্ষ-যক্ষিণীর। এই ভূত চতুর্দ্দশীর মরশুমে কিন্তু এনাদের সাথে সাধারণ একটা আলাপ-পরিচয় ঘটলে মন্দ নয়! হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী হিমালয়ের চির তুষারাবৃত প্রত্যন্ত এলাকায় ধন-সম্পদের দেবতা কুবেরের রাজ্য অলকা। এই রাজ্যেরই অতন্দ্র পাহারাদার যক্ষ-যক্ষিণীরা। ভূত চতুর্দ্দশীর দিন রাজা কুবেরের সঙ্গে তাঁরাও নেমে আসেন এই ধরাধামে। যে গৃহে সেদিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত থাকে তাঁরা খুশি হয়ে সেই গৃহকর্তাকে ধন-সম্পদ দান করে। তবে তাঁরা যেমন উপকারী হতে পারেন তেমনি অপকারীও হওয়া তাঁদের কাছে অসম্ভব নয়। উদ্দামারেশ্বর তন্ত্রে ৩৬ জন যক্ষিণীর বিবরণ সহ তাঁদের পূজা পদ্ধতি এবং নানাবিধ উপাচারের বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে, তাঁদের পুজোয় কোনোরকম ত্রুটি বিচ্যুতি হলে সাধকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! এমন অনেক সাধকেরই খোঁজ মিলবে যাঁরা যক্ষিণী সাধনায় সিদ্ধহস্ত! মহারাষ্ট্রে শ্রী যক্ষিণী দেবীর মন্দিরও রয়েছে। হিন্দু ধর্মে তাঁরা বাদেও অনেকের উল্লেখ মেলে। যেমন গন্ধর্ব, অপ্সরা, কিন্নর। তবে এঁরা সকলেই উপদেবতা।
দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় জলসারও বেশ সুবন্দোবস্ত আছে। আর গন্ধর্ব হলেন সেই সভার সুদক্ষ গায়ক। অনেকে আবার এঁদের দেখাও পেয়েছেন হিমালয়ের মন্দিরে! শিবরাত্রিতে তাঁরা নাকি নেমে আসেন মর্ত্যলোকে এবং সাধারণের মাঝে পুজো করেন মহাদেবের। তবে এঁদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নির্দিষ্ট সাধনা পদ্ধতি। সাধারণ মানুষ এঁদের নিয়ে তেমন ঘাটা ঘাটি করতে স্বচ্ছন্দ নন। এঁদের বাস্তব উপস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও শুনতে কিন্তু ভালোই লাগে। গল্পের আসর জমাতে কিন্তু ‘তেনাদের’ জুড়ি মেলা ভার!
Discussion about this post