মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ ছাড়া ভাতের গরাস গলা দিয়ে নামে না যেন! মাছ কেনার ব্যাপারেও বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। বাজারে কোন কোনায় ইলিশ ভালো আর কোন কোনায় চিংড়ি তা বাঙালির চেয়ে ভালো কেউ জানে না। এপার বাংলা ও ওপার বাংলার বাঙালির অন্যতম খাবার মাছ। ওপারে শুঁটকি মাছ বেশ জনপ্রিয়। এপারের মানুষও বেশ পছন্দ করেন এই মাছ। তাই জুনপুট বললেই চোখে ভাসে তৃপ্তির স্বাদ। দীঘা থেকে ঘন্টা খানেকের পথ। কাঁথি থেকে আরো কম রাস্তা। টোটো বা অটোর ব্যবস্থা আছে। জুনপুট পৌঁছে দেখা যাবে সারি সারি শুঁটকি মাছ। অন্তত ছ’শো মানুষ এই মাছের উপর জীবিকা নির্বাহ করেন। মূলত পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা, শংকরপুর ও জুনপুটে শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। পাওয়া যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপেও।
যে মাছ শুকনো করে সংরক্ষণ করা হয় তাই শুঁটকি মাছ। খাদ্য সংরক্ষণের বহু প্রাচীন পদ্ধতি এটি। জুনপুটে জলের ধার ঘেঁষে দেখা যাবে অনেক মাচা। সার বেঁধে ঝুলছে শুঁটকি মাছেরা। তখনও অনেকের শুঁটকিত্ত্ব প্রাপ্তি হয়নি। অনেকেই তখনও চিরাঠিকরি, পারা, চাঁদা, ছয়না অথবা ছুরি। রোদের তপ্ত আদর তাদের শরীর থেকে সমস্ত জল শুষে না নেওয়া পর্যন্ত তারা শুঁটকি হয়ে ওঠে না। রোদ কড়া থাকলে দু’দিন। নইলে বেশ কিছুদিন সময় লাগে বস্তাবন্দি করতে। শুঁটকি মাছ বানাতে চাইলে প্রথমে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যেতে হবে। তারপর ধরতে হবে ভোলা, লোটে, চাঁদা কিম্বা ছয়না। অথবা মাছের আড়ত থেকে কিনে নিতে হবে তা। কেনা মাছ ভালো করে ধুয়ে পচনশীল অংশ বাদ দিয়ে দিতে হবে। প্রতি একশো কেজিতে তিন কেজি লবণের হিসাবে মেশাতে হবে নুন। এরপর দুই থেকে পাঁচ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে হলুদ লংকা মিশিয়ে রান্না করলেই মিলবে শুঁটকির প্রাচীন স্বাদ।
জুনপুট থেকে প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি মাছ বাইরে রপ্তানি হয়। ৩৫% আসামে, ২৫% বাংলাদেশ। উড়িষ্যায় যায় ১৫ শতাংশ। বাকিটা শিলিগুড়ি, বিহার ও অন্যান্য অঞ্চলে। এখন এই ব্যবসা মার খাচ্ছে খুব। কারন হিসেবে দেখা যাচ্ছে রাসায়নিকের বহুল ব্যবহার। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি করে রাসায়নিক দিচ্ছে মাছে। এতে দীর্ঘদিন টিকে থাকছে তা। চকচক করছে উপর থেকে। মেটাসিড, ফর্মালিন, গ্যামাক্সিনের মতো রাসায়নিক ক্ষতি করছে মানুষের শরীরের। যার ফলে কমেছে শুঁটকির চাহিদা।
আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শুঁটকির বিদেশরপ্তানিতে ঝুঁকছে সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও মুম্বাই আই আই পি’র আওতায় এসেছে এই প্যাকেজিং শিল্প। এখন ক্ষতিকর রাসায়নিকের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য রাসায়নিক। বসানো হচ্ছে কৃত্রিম ড্রায়ার। আসলে কিন্তু ভীষণ স্বাস্থ্যকর এই মাছ। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ শুঁটকি মাছে আছে ভরপুর ভিটামিন। রয়েছে পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের ব্যালেন্স। এজন্যই এর চাহিদা বিদেশেও। একটু কটু গন্ধ লাগলেও দাঁত, হাড় ও ত্বক সুস্থ রাখতে এ মাছের জুড়ি মেলা ভার। তবে চট্টগ্রাম-নোয়াখালির দোমাছা’র রেসিপি যদি জানা থাকে! শুঁটকির স্বাদে তৃপ্ত হবেই হবে রসনা।
Discussion about this post