আবহাওয়া সাময়িক স্বস্তি দিলেও সময়টা আসলে গরমকাল। সূর্যের প্রবল দাবদাহে অস্থির অবস্থা আবারও ফিরতে চলেছে বঙ্গবাসীর জন্য। তবে স্বার্থপরতার এই সমাজের চলতি স্রোতের বিপরীতে গিয়েচ্ছেন এক মানুষ। পথচলতি অচেনা মানুষদের তৃষ্ণা নিবারণে জলছত্রের ব্যাবস্থা করে সকলকে অবাক করে দিয়েছেন মছলন্দপুরের সমীর। নিজের ছোট্ট দোকানের সামনে রেখেছে একটি জলের ঘটি ও ওপরে একটি বোর্ড। তাতে লেখা, ” ঘটিতে মুখ না লাগিয়ে আলগোচে জল খান। সমীরের কথায়, ” সেবাই মানুষের পরম ধর্ম। মানুষের জন্য মানুষের এই ভালোবাসা ছড়িয়ে পরুক আমদের এই সমাজের প্রতিটা কোনায়।”
উত্তর ২৪ পরগনার একটি ছোট্ট শহর মছলন্দপুর। এখানেই রেল স্টেশন থেকে মাত্র মিনিট সাতেক দূরে অবস্থিত সমীরের ছোট্ট ফলের দোকান। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সে এই ফলের দোকান চালাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে সে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তৃষ্ণার্ত মানুষদের জল পান করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবে শুধুই জল পান করিয়েই তার মনে তৃপ্তি না হওয়ায় ধীরে ধীরে সে জলের সাথে একটি করে বাতাসা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। নিজের ছোট্ট ফলের দোকানের সামান্য আয়ের একটি অংশ সে আলাদা করে রাখে এই বাতাসা কেনার জন্য।
তবে সমীরের এই জলছত্র শুরুর পেছনে রয়েছে এক মহান চিন্তা। ছোট বেলাতে সমীর তার মায়ের সঙ্গে পায়ে হেঁটে স্কুল যেতো। এমনই এক গরমের দিনে চলতে চলতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন সমীরের মা। তখন তিনি পথের পাশের একটি দোকানে খাবারের জন্য জল আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু সেই দোকানে জল থাকার পরেও দোকানদার সমীরের মাকে জল দিতে অস্বীকার করেন। আপাত দৃষ্টিতে এই ঘটনা সামান্য হলেও, এই ঘটনা ছোট্ট সমীরের মনে গভীর দাগ কেটেছিল। সেদিন থেকেই সে মনে মনে ঠিক করেছিল যে, সে একদিন বড় হয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষকে জল পান করাবে। এই কাজ করে তার কি লাভ কেউ জিজ্ঞাসা করলে সমীর জানায়, “তার মায়ের মত কত মানুষ এই গরম ও শীত কালে তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে জল দেওয়ার মধ্যে সে তার মাকে খুঁজে পায়। সে পায় এক অদ্ভুদ আনন্দ।”
Discussion about this post