শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপুজোর দিন গোনা। ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’ আলোকবেণু বাজতে আর কয়েকদিনের অপেক্ষা। চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ। কাশ ফুলের সৌন্দর্য আর শিউলির গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে দিন গুনছে আপামর বাঙালি। তার সাথে ঢাকের শব্দ এবং মায়ের ডাকের সাজ দেখার জন্যও অপেক্ষা। কয়েক বছর আগেও ডাকের সাজ বলতে আমরা শোলার সাজের সাবেকিয়ানাকেই বুঝতাম, যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যেতে বসেছে পুরাতনী ডাকের সাজ বা শোলার সাজের সাবেকিয়ানা। শুধু বনেদি বাড়ির পুজো ও সাবেকি প্রতিমার রেওয়াজই টিকিয়ে রেখেছে শোলা শিল্পের অস্তিত্ব। আসুন জেনে নিই আমাদের প্রিয় হাওড়া জেলার তেমনিই এক অবহেলিত প্রবীণ শোলা শিল্পীর কথা৷
নাম প্রণব দাঁ। বয়স হবে আটষট্টি বছর। জানা যায়, হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা ছিলেন তাঁর বাবা। উলুবেড়িয়ার বাণীবন বাঁশতলায় সেই কৈশোরেই চলে এসেছিলেন প্রণব দাঁ-র পরিবার। এখন সেই গ্রামেরই দোতলার একটা ঘরের এক কোণায় বেশিরভাগ সময়ই মগ্ন থাকেন তাঁর সৃষ্টিকলা নিয়ে। অল্প বয়স থেকেই শোলা দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকর্ম করে বিপুল খেতাব কুড়িয়েছেন এই প্রবীণ শিল্পী। এই কাজে তিনি সাহায্য পেয়ে আসছেন তাঁর ভাই, বোন ও স্ত্রীর। নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তোলেন মণ্ডপসজ্জা, মডেল, ডাকসাজ থিমের ওপর কাজ। শুধু তাই নয়, একসময় ক্যালকাটা ইউথ কয়ারের নৃত্য নাট্যের শোলার অলঙ্কারও তৈরি করেছিলেন তিনি। সাজশিল্পী হিসেবে বেশ নামডাক ছিল। ক্যালকাটা সিনে সেন্টার প্রযোজিত সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার রজত জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষ্যে ‘গ্লোব’ এর ডেকরেশন করেছিলেন তিনিই। সেই উৎসবের উদ্বোধক অতিথি তথা শ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিৎ রায় প্রণববাবুর কাজের প্রশংসা করেছিলেন৷
কালের নিয়মে কৃত্রিম প্লাস্টিক বা ফাইবারের সাজের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে শোলার সাজ। খানিকটা সরকারের গাফিলতির দরুন বাংলার শোলা শিল্প আর শিল্পী দুয়েরই অবস্থা আজ রুগ্নপ্রায়। তাই রাজ্যস্তরে পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পীর আক্ষেপ, শোলা শিল্পী হিসাবে নিজের অস্তিত্বের চাইতেও পেশার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে হচ্ছে অনবরত। প্রণব দাঁ’র মত শিল্পীর অভিযোগ, সরকারি উদাসীনতার জন্যই ধীরে ধীরে বাংলার বুক থেকে হারাতে বসেছে শোলা শিল্পের কদর। এই শিল্পের দিকে নতুন প্রজন্মের ঝোঁক একেবারে নেই বললেই চলে। তাই শোলা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন প্রবীণ শিল্পী প্রণব দাঁ।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – অরণিকা ধারা গাঙ্গুলী
Discussion about this post