‘গাজন’ শব্দটি কম বেশি আমরা সকলেই শুনেছি। তবে এর মানে কি জানা আছে? ‘গাজন’ শব্দটি দুটি শব্দ মিলে তৈরি হয়েছে- ‘গাঁ’ যার মানে গ্রাম এবং ‘জন’, যার মানে জনসাধারণ। নামের মধ্যে দিয়েই বোঝা যায় যে এই উৎসব জনসাধারণের উৎসব। চৈত্র মাস চলছে। আর কয়েকদিন পরেই বেজে উঠবে,“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”। চৈত্র মাস মানেই বাংলার বিখ্যাত লোক উৎসব -গাজন। তবে গাজন যে আসলে দেবাদিদেব মহাদেবের বিয়ের অনুষ্ঠান, তা কি জানতেন? জানতেন না তো? পুরো বিষয়টি তাহলে ভালো করে জেনে নিন।
হিন্দু ধর্মের লোকেরা প্রবলভাবে বিশ্বাস করেন শিব ঠাকুরের জন্ম শ্রাবণ মাসে। আর এই চৈত্র মাসের শেষ দিকে নাকি মহাদেব বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই এই চৈত্র মাসের আরেকনাম ‘মধুমাস’। এই মধুমাসেই নীলার্ক (শিবের আরেক নাম) বিয়ে করেন নীল পরমেশ্বরী বা চন্ডীকাকে। পুরাণমতে এই বিবাহে পরমেশ্বরের অনুগামীদের মধ্যে ভূত, প্রেত, দানব, দৈত্য এদেরকে পাওয়া যায়। নীলকন্ঠের এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরেই গাজন উৎসব পালন করা হয় প্রতি বছর। তারাপদ সাঁতরা গাজন উৎসবকে “বাংলার প্রকৃত গণ উৎসব” বলে উল্লেখ করেছেন। গাজনের মূল উপাসকদের ভোক্তা বলা হয়। একটু অদ্ভুত লাগছে তাই না? পৃথিবীতে কতো কিছুই তো অদ্ভুত! যাই হোক আসল কথায় ফিরে আসি। এই ভোক্তারাই বিবাহের বরযাত্রী হয়ে যাবতীয় নিয়ম পালন করেন।
শিবঠাকুর আমাদের কাছে নীলকন্ঠ বা নীলার্ক নামেও পরিচিত। তাই বাংলায় গাজনকে নীলপূজাও বলে হয়ে থাকে। প্রায় প্রত্যেক মা তা সন্তানদের জন্য এই নীলপূজার ব্রত পালন করে থাকেন। বাংলার এই নীলপূজাই উত্তরবঙ্গ সহ মালদা তে গম্ভীরা নামে খ্যাত।এই গাজন উৎসবে পিঠফোঁড়, বানফোঁড়,চাটুফোঁড়, কাঁটাঝাপ, মানিকচুরি, সঙনাচ সহ আরও নানা নিয়ম দেখতে পাওয়া যায়। এই গাজন উৎসবে মেতে ওঠে দুই মেদিনীপুর, পাথরপ্রতিমা, শান্তিপুর, চাকদহ, খানাকুল, তুফানগঞ্জ প্রমুখ জায়গার মানুষেরা।
সত্যি বটে! বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। যদিও গত দুবছর করোনার দাপটে প্রায় সব কিছুই বন্ধ ছিলো। তবে এবার একটু স্বস্তি। দেবাদিদেব মহাদেব মুখ তে চেয়েছেন। আর তাই তো সবাই আবার মেতে উঠেছে গাজন উৎসবে।
Discussion about this post