আমাদের দেশ ভারত এক ঐতিহ্যের দেশ। এদেশের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে বহু স্থাপত্য আর রত্নভাণ্ডার। প্রাচীন স্থাপত্যের বহু নিদর্শন এখনও আমাদের মন জয় করে নেয়। সেগুলির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের যেন হারিয়ে ফেলি আমরা। যেন খুঁজে পাই ইতিহাসের পাতা! তবে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলির নিজস্ব কিছু গল্পও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম রাজস্থানের শিশ মহল। রাজস্থানের অবস্থিত শিশ মহলের কথা প্রায় কারুরই অজানা নয়।আট থেকে আশি সবারই চোখ ধাঁধিয়ে দেয় শিশ মহলের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য্যের টানে দেশ বিদেশ থেকে বহু পর্যটক ছুটেও আসেন। তবে শিশমহলের ইতিহাসের সঙ্গে সবার হয়তো তেমন পরিচয় নেই। অথচ তারও নিজস্ব একটি কাহিনী আছে। সেই কাহিনীটি ভালবাসার।
১৭১৬ সালে মহারাণা প্রতাপের আমলে বানানো হয় শিশ মহল। মহারাণী আজবদকে উপহার হিসাবে দেওয়ার জন্য মহলটি বানান তিনি। খুবই অল্প বয়সে মহারাণার সঙ্গে মহারাণী আজবদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। রাণার তখন সতেরো বছর বয়স, আজবদ প্রায় পনেরো। তখনও রাণার রাজ্যাভিষেক হয়নি। বিয়ের পর মহারাণী মহারাণার কাছে একটি ছোট্ট আবদার রাখেন। রাণা যখন মহারাজা হবেন, সেইসময় নতুন নতুন দেশ বিদেশ দেখাতে হবে রাণীকে। শুনে রাণা তো এককথায় রাজি, খুশি রাণীও। এরপর কেটে গেল বহু বছর। রাজার মসনদে বসলেন মহারাণা প্রতাপ। আজবদ তখন রাজমাতা। কিন্তু নানা কারণে তাঁকে দেশ দেখানো হয়ে ওঠেনি রাজার। রাজনৈতিক কারণে আরও দশটি বিয়ে করলেও পাটরাণী আজবদের প্রতি তাঁর টান এখনও আগের মতই। এদিকে শত ব্যস্ততার মধ্যেও রানীকে দেওয়া কথা রাখতে না পারার কষ্ট প্রায়ই তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
একদিন দুপুরে নিজস্ব মহলে মহারাজা বিশ্রাম নেওয়ার সময় হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে দেওয়ালে রং বেরঙের ছায়া পড়েছে। নড়েচড়ে বসে ভাল করে দেখে বিষয়টা বুঝলেন তিনি। মহারাণীর হাতের রত্নখচিত চুড়িতে দুপুরের রোদ এসে পড়ায় দেওয়ালে রঙিন সব নকশা তৈরি হয়েছে। ব্যাস, এক আশ্চর্য বুদ্ধি খেলে গেল মহারাজের মাথায়। রাণীকে তিনি উপহার দিলেন রঙ-বেরঙের কাঁচে মোড়া এক মহল। যার নাম দিলেন – শিশমহল। শিশমহলের লাল-নীল-সবুজ কাঁচে, প্রদীপের আলোয় দেখা যায় নানা রঙিন প্রতিবিম্ব। সে যেন এক মায়ারাজ্য! বহু বছর আগে অল্প বয়সী কুমার প্রতাপ সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আজবদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন তাঁকে নানান রঙিন দেশে নিয়ে যাওয়ার। জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে তিনি রাণীকে উপহার দিলেন সেই রঙিন মায়াবী দেশ। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার টান তাঁর এতটাই ছিল, এক মূহুর্তের জন্যও তাঁকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা ভুলে যাননি রাজা। বিশ্বাসীদের কথায়, আজও নাকি উদয়পুরের বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায় হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো তাঁদের এই ভালবাসার এই কাহিনী।
Discussion about this post