পৌষ সংক্রান্তির দিনে ২০০ বছরের প্রাচীন উৎসব আয়োজিত হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরনো এলাকায়। ঢাকার স্থানীয়রা বলে ‘সাকরাইন’ উৎসব। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ মাসের শেষ দিনে এই সাকরাইন উৎসব আয়োজন করা হয়। সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ ঘুড়ি খেলা।এই দিন সব বয়সী ঢাকাইয়ারা বাহারি রঙের কাগজ, পলিব্যাগ ও বাঁশের অংশবিশেষ দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করে।
ঘুড়িগুলোর নাম চমৎকার যেমন, পঙ্খীরাজ, চাপালিশ, চানদার, নাকপান্দার,গোয়াদার, চোখদার, মাসদার, লেজলাম্বা,চারভুয়াদার, পানদার, লেনঠনদার, মাক্ষী, গায়েল। ঘুড়ির দোসর বাহারি রঙের লাটাই। লাটাইয়ে গোটানো সুতোর মধ্যে রক সুতা, ডাবল ড্রাগন, কিংকোবরা, ক্লাক ডেবিল, ব্লাক গান, ডাবল গান, সম্রাট, ডাবল ব্লেট, মানজা, বর্ধমান, লালগান ও টাইগার অন্যতম। এসব বাহারি ঘুড়ির মালিককে নিয়ে আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। পুরনো ঢাকার প্রতিটি বাসার ছাদে এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগীদের মাঝে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ নির্ধারণ করা হয়। ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায় মূলত যে যত বেশি উড়ন্ত ঘুড়ির সুতা দিয়ে অন্য ঘুড়ি কাটতে পারবে এবং শেষ পর্যন্ত যার ঘুড়ি উড়বে সে হবে চ্যাম্পিয়ন।
সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো শেষে সন্ধ্যার পর থেকেই প্রতিটি বাড়ির ছাদে শুরু হয়ে যায় আতশবাজী,ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গান বাজনার তালে তালে চলবে আতশবাজীর খেলা। সাকরাইনে পুরনো ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া হয় এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ।
পুরনো ঢাকার ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ,ফরাশগঞ্জ , মুরগীটোলা, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার, লালবাগ এবং হাজারীবাগ এলাকার মানুষ সাকরাইন উৎসবে মেতে উঠে।
Discussion about this post