জলের আরেক নাম জীবন৷ কিন্তু তার আয়ুই ক্রমশ কমে আসছে৷ বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয়৷ সম্প্রতি চেন্নাইয়ে অভূতপূর্ব জল সংকট দেখা গিয়েছে৷ এই ধারায় ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও৷ চলতি বছরের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, হুগলি, নদিয়া, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার একটা বড় অংশে গ্রীষ্মে জলস্তর ১৮ মিটার নীচে নেমে গিয়েছে৷ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের অনেক অংশের রিপোর্টও উদ্বেগজনক৷
তবে হাওড়া জেলার জল সংকটের ব্যাপারটি নতুন নয়। ঘটনাটি বুঝতে গেলে আমাদের প্রায় ২০০ বৎসর পিছিয়ে যেতে হবে। ১৮৮০ সালে এক শিবপুর নিবাসী তার আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন যে সেই সময় খাবার জল আনা হতো গঙ্গা থেকে মাত্র এক পয়সার বিনিময়ে এক ভার জল এবং সেই জল বড় বড় জালার মধ্যে রেখে দেওয়া হত। কলকাতায় কলের জল আসে ১৮৭০ এ, আর হাওড়ায় আসে ২৬ বছর পরে। সময় তখন ১৮৯৪, গঙ্গার জল নিয়ে চলছে গবেষণা। জানা যায় পলতার গঙ্গার জল অধিক লবনাক্ত তাই পলতায় রয়েছে পানীয় জলের শোধনাগার। ঠিক তার বিপরীতে রয়েছে শ্রীরামপুর (হুগলি) কিন্তু সেখানকার জল তুলনায় কম লবনাক্ত। সেই কারণে হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি বার্ন কোম্পানিকে একটি শোধনাগার সহ জলাধার শ্রীরামপুরে নির্মাণের ভার দেন।
১৮৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার ছোট লাট আলেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জী সাহেব হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটির জল ব্যাবস্থা উদ্বোধন করেন। এই জল শোধনাগারই ‘হাওড়া ওয়াটার ওয়ার্কস’ নামে পরিচিত। শ্রীরামপুর টেক্সটাইল কলেজের বিপরীতে ৮২ বিঘা জমির উপরে এই জলকল গড়ে উঠেছিল। এরমধ্যে জল থিতানোর জন্যে ৪ টি পুকুর এবং পরিশোধনের জন্য ১১ টি ফিল্টার বেড আছে। দৈনিক ১২৬ লক্ষ গ্যালন জল হাওড়া শহরের পঞ্চানন তলা রোড, সালকিয়া, কৈপুকুর এবং শিবপুর জলাধারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
দাঁত থাকতে আমরা যেমন দাঁতের মর্যাদা বুঝি না, তেমনি জল থাকতে জলের মর্ম বুঝতে পারছিনা। জীবনের সংকট মেটায় যে জল, সে জলই এখন সঙ্কটে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনো বাঁধে, তা জমি বা এলাকার দখল নিয়ে নয়, জল সম্পদের অধিকার নিয়ে বাঁধবে। ইতিমধ্যে ইরাক ও ইরানের মধ্যে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর উপসাগরমুখী সঙ্গমে সাত-এএল-আরবের জলের অধিকার নিয়ে দশ বছর ব্যাপী যুদ্ধ ঘটে গিয়েছে। কাজেই হাওড়া তথা ভারতবাসী, সাবধান!
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – সঞ্জয় নাথ
Discussion about this post